সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীর মাইনরিটি

“ত্বস্তিদেব ত্রিশ উপাদান একত্র মিশ্রিত করিয়া (Egg Beater দ্বারা উত্তমরূপে ফেঁটিয়া!) ললনা রচনা করিলেন। বলা বাহুল্য, রমণী সৃজন করিতে সৃষ্টিকর্তাকে অত্যধিক বেগ পাইতে হইয়াছিল। অতঃপর ত্বস্তি সেই অতি যত্নে নির্মিতা অঙ্গনা পুরুষকে উপহার দিলেন। অষ্ট দিবস পরে পুরুষ কহিল,”সে তো আমার জীবন বিষাক্ত করিয়া তুলিয়াছে। সে যে অবিরত বক-বক, কচর কচর করে; সে আমাকে এক তিল অবকাশ দেয় না; এক কথায় সে যারপরনাই মন্দ।” ত্বস্তি অবলাকে ফিরাইয়া লইলেন। অষ্টাহ অতীত হইলে পুরুষ পুনরায় কহিল, “তাহার বিরহ আমার জীবনে অসহ্য!” ত্বস্তি বিনা বাক্যব্যয়ে তাহাকে পুনরায় সে রমণী প্রদান করিলেন।
চতুর্থ দিবসে ত্বস্তিদেব দেখিলেন পুরুষ বনিতাসমভিব্যাহারে তাঁহার নিকট আসিতেছে।
“দেব আমার ক্ষমা করুন, আমি ঠিক বুঝিতে পারি না, নারী আমার আনন্দের না বিরক্তের কারণ। তাহাকে লইয়া আমার সুখশান্তি অপেক্ষা কষ্টের ভাগই অধিক।আমাকে ইহা হইতে মুক্তি দান করুন।”
এবার দেবতা ক্রুব্ধ হইয়া কহিলেন, “যাও তোমার যাহা ইচ্ছা কর গিয়া!”পুরুষ উচচঃস্বরে কাঁদিয়া কহিল, “এ যে আমার কালস্বরূপ। আমি যে কিছুতেই ইহার সঙ্গে থাকিতে পারিনা!” ত্বস্তি উত্তর দিলেন, ‘তুমি তো ইহাকে ছাড়িয়াও থাকিতে পার না!’
পুরুষ নিরুপায় হইয়া মনের দুঃখে খেদ করিতে লাগিল, ” কি আপদ! আমি রমণীকে রাখিতেও চাহি না, ফেলিতেও পারিনা!!”
তদবধি নারী অভিশাপরূপে পুরুষের গলগ্রহ হইয়া রহিয়াছে!!!”
-‘নারী-সৃষ্টি (পৌরাণিক উপাখ্যান)’, ‘মতিচূর’, বেগম রোকেয়া। [অংশ টি ঈষৎ সংক্ষেপিত]

উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞায়,’ নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়। এর বিপরীত পুরুষ, নর প্রভৃতি। সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)।’
বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় লিঙ্গ বলা হয় নারীকে।
আজ যখন নারীর অধিকার নিয়ে এত কথাবার্তা, মিটিং-মিছিল-সমাবেশ, তখন প্রশ্ন জাগে,কেন আমাদের আলাদা করে নারী অধিকারের প্ল্যাকার্ড নিয়ে নামতে হবে! মানুষ হিসেবে কি নারী পুরুষ উভয়ের অধিকার বোঝাচ্ছে না? তাহলে কেন মানবাধিকার দিয়েই নারীদের অধিকারগুলো বোঝানোটা শেষ হচ্ছেনা,আলাদা করে কেন নারী অধিকার শব্দটার ওপর আমাদের জোর দিতে হচ্ছে? কেন তাহলে ‘পুরুষাধিকার’ নামক শব্দের প্রয়োজন পড়ছে না?
উত্তরটা বিভিন্ন হতে পারে। একেকজন এটাকে একেকভাবে বিশ্লেষণ করবেন। তবে মূল উত্তরটা জানতে হলে আমাদের শেঁকড়ে নজর দিতে হবে। উত্তরণের পথও সেখানটাতেই।
একটা সময়ে নারী আর পুরুষের মাঝে এই ভেদাভেদটুকু ছিলনা, প্রাচীন সমাজে কাজের বণ্টন প্রাকৃতিক দিক থেকে হলেও, সামাজিক ভাবে পার্থক্য হতনা। কৃষিকাজ মানে শস্য সংগ্রহের কাজগুলো নারীরা করতো,আর পুরুষরা শিকার। এভাবেই চাষাবাদ এর উৎপত্তি নারীর হাতেই। দেখা যায় সভ্যতা যত বিকশিত হয়েছে,নারীর ওপর বেড়েছে পুরুষের আধিপত্য। নারীর মর্যাদা এসে দাঁড়িয়েছে তলানিতে।

এর শুরুটা আসলে কৃষিভিত্তিক আর পশুপালনভিত্তিক সমাজ থেকে,তখন বিনিময় প্রথা চালু হয়েছিল। আর আস্তে আস্তে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ নানাবিধ কারণে মানুষের জন্য তার আবাস পাল্টানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়,তখন নারীর সাথে পুরুষের পার্থক্যগুলো তাদেরকে ভিন্ন সত্তা হিসেবে ভাবার জায়গাটিকে প্রশস্ত করে। আর এভাবেই নারী জাতির অপ্রাধান্যের অধ্যায় এর সূচনা হয়।

রাহুল সাংকৃত্যায়নের ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’য় দেখা যায় প্রাচীন সমাজে মাতৃসূত্রীয় সমাজের শুরু। নারীদের হাতে একটা ব্যাপক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকতো।সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং অন্য যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিক দিয়ে নারী আর পুরুষের ভূমিকা ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজকে যেই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কথা বলা-সেটাই তখন বর্তমান ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে বিষয়টা ধামাচাপা পড়তে থাকে। ক্ষমতার লোভ থেকে শুরু হয় যুদ্ধবিগ্রহের যুগের। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নানা নিয়মনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদেরই হাতে। এভাবেই নারীকে বেঁধে ফেলা হয় নিয়মের বেড়াজালে। যুদ্ধবিগ্রহ আর নানা ধর্মের দোহাই দিয়ে আস্তে আস্তে শুরু হয় নারীর ওপর জুলুমের যুগ। নারীরা পরিণত হয় ভোগের বস্তুতে। পুরুষরা হয় সর্বেসর্বা। এর পেছনে যতটা কাজ করেছে পুরুষদের জুলুম,তেমনই নারীর মুখ বুজে সব মেনে নেয়ার অভ্যাস। নারীকে শেখানো হল তার কাজের ক্ষেত্রটা,যা খুব সীমিত আর পুরুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করা। এভাবেই পুরুষের উন্নতি হলো,তারা এগিয়ে গেলো,পিছিয়ে রইল নারী আর তাকে ফেলে রাখা হলো ঘরের ভেতরটায়। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া ,বলে গেছেন, ‘আপনারা হয়তো শুনিয়া আশ্চর্য হইবেন যে, আমি আজ ২২ বৎসর হইতে ভারতের সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীবের জন্য রোদন করিতেছি। ভারতবর্ষে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব কাহারা জানেন? সে জীব ভারত নারী। এই জীবগুলির জন্য কখনও কাহারও প্রাণ কাঁদে না।’

মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সুহানের স্বপ্ন’ নামক বইটিতে ‘ঘৃণার সঙ্গে বসবাস’ নামক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীটি পড়েছিলাম,গল্পের মধ্য দিয়ে সেখানে কথিত হয়েছে নারীকে যেই অবস্থানে দেখে পুরুষেরা সেই দৃষ্টিভঙ্গী টি (যদিও এটির মূল কাহিনী ভিন্ন, তবে এক জায়গায় নারী নির্যাতনের যুগের কথা আসে)। এটিতে তিনি একটা কথা তুলে এনেছেন, যা আমরা অনেকেই কখনো কখনো আশংকা করি। তা হলো, নারীকে সমাজে যেই অবস্থানে দেখা হয়;হয়তো নারীর বর্তমান প্রয়োজনটুকু না থাকলে নারীর স্থান হতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণিদের তালিকায় ! নারী পুরুষের সাম্য থাকলে আজ যে পরিস্থিতি দেখতে হত না। গায়ের জোরের সমাজ ব্যাবস্থায়,নারীকে ‘শো পিস ‘ এর মত বিবেচনা করা হয়। মুনাফা লাভের সুবিধার্থে নারীকে শেখানো হচ্ছে, ‘তুমি পণ্য’। আমাদের বেশিরভাগ মেয়েরা সাজগোজ,পোশাক আশাকের ট্রেন্ডের মাঝে আটকা পড়ে যায়। এর একটা বড় কারণ হলো, তার আশপাশের ব্যবস্থাতে তাকে এটা শেখানো হচ্ছে, সে দেখছে হলিউডি-বলিউডি কমার্শিয়ালিটি। নারীকে পণ্যের মত উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাকে দিয়ে বিজ্ঞাপনের দর্শক বাড়ানোর লক্ষ্যে। যতটা পারা যায় নারীকে ছোট করা হচ্ছে। নারীকে শেখানোর চেষ্টা চলছে নতুন থিওরি, কেবল রূপকে নারীর সম্বল হিসেবে দেখিয়ে। মিডিয়াওয়ার্ল্ড এ নারীর মূল্যায়ন একটা পণ্যের মতই। দেখা যায়,মিডিয়া জগতে নারীর নিরাপত্তা ও সম্মানের যথেষ্ট ঘাটতি থাকলেও,পুরুষরা অধিকাংশ দিক থেকেই নারীদের তুলনায় বেশি পারিশ্রমিক পান।

১৯৩০ সালের এক অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে বক্তব্যে নিখিল বঙ্গের প্রথম মুসলিম মহিলা গ্র্যাজুয়েট বেগম ফজিলাতুন্নেছা বলেছিলেন, “নারী-শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন ও বলেন। নারী সমাজের অর্ধাঙ্গ, সমাজের পূর্ণতালাভ কোনোদিনই নারীকে বাদ দিয়ে সম্ভব হতে পারে না। সেই জন্যেই আজ এ সমাজ এতোটা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। | The highest form of society is one in which every man and woman is free to develop his or her individuality and to enrich the society what is more characteristic of himself or herself. কাজেই এ সমাজের অবনতির প্রধান কারণ নারীকে ঘরে বন্দি করে রেখে তার Individuality বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রাখা। নারী-শিক্ষা সম্বন্ধে এতোটা কথা আজ বলছি তার কারণ সমাজের গোড়ায় যে-গলদ রয়েছে সেটাকে দূরীভূত করতে না-পারলে সমাজকে কখনই সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারা যাবে না।”

আজকাল আমাদের নারীশিক্ষার কথা যদি বলি,অত্যন্ত দুঃখিত চিত্তেই বলতে হয়। আমাদের নারীশিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে বলা হয়,কিন্তু বাস্তবিক অর্থেই কি তা হচ্ছে? এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে ধাপে একটি মেয়েকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়,শুধুমাত্র সে একজন মেয়ে বলে। রাস্তা-ঘাটে, ক্লাসরুমে , এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতেও মেয়েরা তাচ্ছিল্যের পাত্র। আর যে বিষয়টা নারীশিক্ষার জন্য বড় হুমকি, তা হলো নারীর নিরাপত্তার অভাব। নারীর প্রতি শ্রদ্ধাই যে সমাজে নেই, সে সমাজে রাস্তা-ঘাটে, বাইরে চলতে গেলে যে নারীকে নিগৃহীত হতে হবে,এ আর বিচিত্র কী! অন্যদিকে,নারীর শিক্ষাকে অনেকে কেবল ভালো একটি পাত্র পাওয়ার আশায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর বাল্যবিবাহের কথা-সে নাহয় ছেড়েই দিই। কারণ, ১৬ বছরকে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স করে ফেলা হচ্ছিলো যখন, সেখানে বাল্যবিবাহ বলতে আসলে যে কী বোঝানো হয়, সেটা বোঝা মুশকিল! আর এই অবস্থায় নারীশিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে বলা হলে ভুল বলা হবে। এসব ক্ষেত্রে যদি অনেকেই আর্থিক সক্ষমতার দিকটির প্রতি আলোকপাত করে থাকেন,তবে বলতেই হয়, ধনী পরিবারগুলোতেও কিন্তু কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়, এমনকি অনেকেই মনে করেন যে মেয়েদের পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। অনেকেই যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেয় অনেকটা ইচ্ছে করেই! তার মানে কি- নারী একটা বাহুল্য বা বোঝা (!), যাকে বয়ে নিতে হবে বলে পুরুষকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখতে হবে সম্পদের বিনিময়ে?

বর্তমান সমাজব্যবস্থা থেকে সমতা শব্দটি পুরোপুরিভাবে বিদায় নিয়েছে বৈকি! আজকের সমাজব্যবস্থায় নারীশিক্ষার নামে যা করা হচ্ছে,তাও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রোফিটেরই অংশ। আগে নারীর কাজ বলতে বোঝানো হতো,সে ঘর সামলাবে, রান্নাঘর সামলাবে, মনোরঞ্জনের কাজে সর্বদা থাকবে কেবল পুরুষের জন্য। আর এখনকার সর্বগ্রাসী ব্যবস্থায় নারীকে সংসার সামলাতে তো হবেই,সাথে বাইরের কাজও করতে হবে দক্ষতা অনুসারে। চাকরিজীবী নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া মানে যেন ‘একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি’ এ ধরণের অবস্থা!! আর শ্রমবাজারে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নারীদের মূল্যায়ন মানুষ হিসেবে হয় না, বরং আলাদা জাতি নারী হিসেবে হয়। পারিশ্রমিক হোক কিংবা সুযোগ -সুবিধা কোনো একটা ক্ষেত্রে অবশ্যই পুরুষ ও নারীর মধ্যে বৈষম্য থাকেই।

মূলত নারীশিক্ষার প্রকৃত অর্থ স্বার্থক হবে তখনই,যখন নারীরাও পুরুষদের মত সমান সুবিধা, অধিকার ও স্বাধীনতার সাথে শিক্ষা গ্রহন করতে পারবে।

আমাদের সুবিধাবাদীতার যুগে সমতা শব্দটার কী নির্বিচার মৃত্যু! পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী হওয়া সত্ত্বেও তারা ‘সেকেন্ড জেন্ডার’ কিংবা ‘মাইনর’ বা অপ্রধান ! নারীশিক্ষার সুযোগের জায়গাটা বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ ও মেকিভাবে তৈরি করে দেওয়াটাও নারীকে কৌশলে শান্ত রাখার এক প্রক্রিয়া,যেমনটা ইংরেজরা ভারতবর্ষের ওপর দেখিয়েছিল। তবে এতেও নারীরা থেমে নেই,অনেকটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হলেও তারা চলছে। প্রথাবিরোধী লেখক প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘নারী’ বইতে লিখেছেন আমাদের দেশের শৃঙ্খলিত নারী সমাজের কথা। বলেছেন, ‘নারী সম্ভবত মহাজগতের সবচেয়ে আলোচিত পশু।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে, করে রেখেছে দাসী; তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো কখনো স্তব করে দেবীরূপে। পুরুষ এমন প্রাণী, যার নিন্দায় সামান্য সত্য থাকতে পারে; তবে তার স্তব সুপরিকল্পিত প্রতারণা।’ভারতবর্ষের সেই সতীদাহ প্রথার কথাই ধরা যাক না! দেবীতুল্য যে নারী, তার প্রাণের কি না কোন মূল্য নেই,স্বামীর মৃত্যু হলে তাকেও মরতেই হবে! বাংলার প্রাচীন ইতিহাস এর বিবরণসমূহে রানীদের এবং উপলক্ষবিশেষে রাজকীয় ভগিনীদের নাম পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু সবসময়ই পুরুষদের নামের সাথে যুক্ত হয়ে। অর্থাৎ তারা নিজেদের পরিচয়ের বদলে পুরুষের পরিচয়েই পরিচিত।

২০১১ সালে ভারতীয় পত্রিকা ডিএনএইন্ডিয়া ডেইলিবেস্ট/নিউজউইক জরিপের কথা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ এ নিউজউইক/ ডেইলিবেস্টের জরিপ ও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘বেস্ট এন্ড ওর্স্ট প্লেসেস ফর উওমেন’ অর্থাৎ বর্তমান পৃথিবীতে কোন দেশ নারীর জন্য কতটা বসবাসযোগ্য – এই অনুসন্ধানে ১৬৫ টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯ তম। একটা প্রশ্ন থেকেই যায়,যে দেশের প্রধানমন্ত্রীরা দীর্ঘসময় ধরে নারী,সে দেশই যদি নারীর বাসযোগ্যতার দিক থেকে এত পিছিয়ে থাকে তবে এই ক্ষমতায়নের বিষয়টি কি একটা লোকদেখানো ব্যাপার নয়? এমনকি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায়,এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ১৪১ এ আর সৌদি আরব ১৪৭ এ!তারমানে , নারীর প্রতি অর্থনৈতিক দিকেও এসব দেশে নারীর প্রতি ঠিক সুবিচার হচ্ছে না। কারন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলো তো চাইলেই নারী উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে পারে সবদিক থেকেই! তবে কি বিষয়টি এটাই বোঝায় না ,যে মূল পার্থক্য আসলে দৃষ্টিভঙ্গিতেই !

বলা হয়,ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। আমাদের সমাজেও, যতই নারীরা ক্ষমতায় এগিয়েছে বলা হোক না কেন,নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর জায়গাটি সেই একই থেকে গেছে। বর্তমান পৃথিবীতে নারীরা এখন আর গৃহবন্দী নেই ঠিক,কিন্তু এই মুক্তিও ঠিক যেন মুক্তি নয়। নারী হিসেবে জন্ম নেওয়া যেন একটা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই না। নারীরা সারাজীবন বাঁচে একটা আশংকা নিয়ে। আর তার জীবনই যেন পুরুষের কাজে সহায়তা! সেও যে একজন মানুষ , যার অধিকার কোন অংশে পুরুষের চেয়ে কম না, তা আমাদের মগজ ধোলাই করে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। ঘরের বাইরে আজ প্রতিটি পদক্ষেপই যেন আসন্ন কোনো বিপদের আশংকা নিয়ে নারীদের ফেলতে হয়। ঘরের বাইরের এই জগতেও তার নিয়ন্ত্রক থেকে গেছে পুরুষই।তারাই প্রেজেন্টার,নারী আইটেম। নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচার আর নিপীড়নের দায় পুরুষের না,নারীরই,একথা প্রমাণ করতে মরিয়া ভোগবাদী বিশ্ব। নারীর মুখ বুজে সব মেনে নেওয়ার প্রবণতাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে যুগে যুগে। নারীর ঘাড়ে তকমা জুটেছে অবলা নারী! আর এর পেছনেও কাজ করেছে ধর্ম কিংবা নিয়মের নামে গিলিয়ে দেয়া পুরুষদের কর্তৃত্ববাদী ডোজ! নারীর মুক্তির জন্য দরকার সমতা। প্রকৃত স্বাধীনতা । দরকার সাম্য, দরকার দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন!

Loading

Leave a Comment