বিষমিষ্টি

আমি ভাবছিলাম এই যে আমাদের সমাজ, হাইস্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদেরকে যে এই রকম ‘ম্যাচিউর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে ‘ম্যাচিউরটি’টা আসলে কেমন? এজন্যই কাকাড্ডার এই ম্যাগাজিনটির জন্য আমরা যখন লেখা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম তখন লেখার কোনো বাঁধাধরা ক্যাটাগরি রাখিনি। বলেছিলাম ইচ্ছে মতো লেখা দিতে। পেছনের কারণটা হলো, আমরা দেখতে চেয়েছিলাম পনেরো থেকে সতেরো বছর বয়সী ছেলে-মেয়েরা আসলে ভাবছেটা কি! ‘ম্যাচিউরিটি’ কিন্তু সত্যিই এসেছে। যারা লেখা দিয়েছে তাদের লেখাগুলো যদি অভিভাবকদের দেখানোর সুযোগ হতো তবেই তারা বুঝতে পারতেন যে, এই ‘ম্যাচিউর’ করে দেয়ার প্রক্রিয়াটা আসলে কতোটুকু যৌক্তিক! যে ছেলেটা জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে ত্রিশ বছর বয়সী বেকার যুবকের ভাবনাটা ভেবে ফেলেছে, স্বপ্ন ভঙ্গের স্বাদ পেয়ে গেছে, সে যে ত্রিশ বছর বয়সী যুবকের আবেগের স্বাদ নিতে চাইবে না সে গ্যারান্টিকে দিতে পারে? দ্বায়িত্ব নেয়ার জন্য কাঁধটাকে চওড়া হতে দিন, দূর্বল কাঁধে হাজারো প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দিলে কেবল কাঁধটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মন, শরীর আর দ্বায়িত্ববোধ সবগুলো একসাথে বাড়তে দিতে হবে। জীবনের সব জটিলতা কেনো অতো ছোটো বয়সেই জেনে যেতে হবে?

Loading

চিন্তা স্বাধীনতার ইশতেহার

এই লক্ষ্য অর্জন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য শাসনব্যবস্থার মূলে আমাদের অনবরত আঘাত করতে হবে। আমাদের মধ্যেই অনেকেই আছেন যারা বিদেশে গিয়ে এইসব বড় বড় কর্পোরেশন আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বন্দী করে রাখা দারুণ দারুণ সব বইপত্র পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। ওপেন অ্যাকসেস মুভমেন্ট তাদেরকে আহবান জানাচ্ছে তারা যেন তাদের এই সুবিধাটুকু শুধু নিজেরা ভোগ না করে সবার সাথে শেয়ার করেন। কারণ, পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ সেখানে যেতে পারেন না, কিন্তু, তারা ভাগ্যবান হওয়ায় সেসব বইপত্র পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাই, তারা যেন আমাদের জন্য সেইসব বইপত্রের ডিজিটাল সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন।

Loading

বিজ্ঞান চর্চা ও বিজ্ঞান মনস্কতা

বিজ্ঞানশিক্ষা কেবলমাত্র বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কিছু তত্ত্ব শেখায়। সেগুলো মানুষকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করে না, ফলে শাসক থাকেন নিরাপদ। শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানশিক্ষা বলতে আমি শুধু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতকে বুঝাচ্ছি না। “শিক্ষাব্যবস্থা” বা “বিজ্ঞানশিক্ষা” – এসবের প্রকৃতি সমগ্র পৃথিবীতেই কমবেশী একইরকম। খোদ ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে জর্জ বার্নাডশ বলেছিলেন, “একজন ছাত্রকে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী দেওয়া হয় কখন? যখন সেই ছাত্র একটা তথাকথিত শিক্ষাপ্রদানের পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত সে নিজের সম্বন্ধে ভাববার সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেল তখন।”

Loading

নীল-গোলাপীর ফ্যাশনের ইতিহাস

২ মাস আগে আমার ক্লাস টু পড়ুয়া একমাত্র মামাত ভাইকে আমার মা আদর করে একজোড়া গোলাপী কনভার্স কিনে দেয়। সে এগুলো পড়ে ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে তাকে নিয়ে হাসিতামাশা শুরু হয়। একারণে সে আর জুতোগুলো পড়েনি। গোলাপী রংটাকে মানুষ কেন এভাবে দেখে তার আসল কারণ শুনলে তোমাদেরও হাসি ছাড়া উপায় থাকবেনা।

Loading

সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীর মাইনরিটি

আমাদের সুবিধাবাদীতার যুগে সমতা শব্দটার কী নির্বিচার মৃত্যু! পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী হওয়া সত্ত্বেও তারা ‘সেকেন্ড জেন্ডার’ কিংবা ‘মাইনর’ বা অপ্রধান ! নারীশিক্ষার সুযোগের জায়গাটা বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ ও মেকিভাবে তৈরি করে দেওয়াটাও নারীকে কৌশলে শান্ত রাখার এক প্রক্রিয়া,যেমনটা ইংরেজরা ভারতবর্ষের ওপর দেখিয়েছিল। তবে এতেও নারীরা থেমে নেই,অনেকটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হলেও তারা চলছে। প্রথাবিরোধী লেখক প্রয়াত হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘নারী’ বইতে লিখেছেন আমাদের দেশের শৃঙ্খলিত নারী সমাজের কথা। বলেছেন, ‘নারী সম্ভবত মহাজগতের সবচেয়ে আলোচিত পশু।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘পুরুষ নারীকে দেখে দাসীরূপে, করে রেখেছে দাসী; তবে স্বার্থে ও ভয়ে কখনো কখনো স্তব করে দেবীরূপে। পুরুষ এমন প্রাণী, যার নিন্দায় সামান্য সত্য থাকতে পারে; তবে তার স্তব সুপরিকল্পিত প্রতারণা।’ভারতবর্ষের সেই সতীদাহ প্রথার কথাই ধরা যাক না!

Loading

Barbie Politics: বার্বির রূপকথা, বার্বির রাজনীতি

এই ধরণের রোগের ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট হয় ও স্পটলাইটে আসে যখন প্রিন্সেস ডায়ানা তাঁর ডায়েট কেন্দ্রিক মানসিক বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করেন। এর পরে অনেক জনপ্রিয় পশ্চিমা তারকাও তাঁদের না খাওয়ার বিপত্তির কথা স্বীকার করেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে দেয়া যায় আরেকটি তথ্যও। বার্বির আবিষ্কারক রুথ হ্যান্ডলারের নাতনি স্টেসি হ্যান্ডলার তার ‘দ্য বডি বারডেন: লিভিং ইন দ্যা শ্যাডো অফ বার্বি’ বইটিতে তার ‘না খাওয়া বিপর্যয়’-এর কারণ হিসেবে বার্বি পুতুল ও তার দাদিকে দায়ী করেন।

Loading

পুরুষ বাক্স

যেখানে বাবা তার ছেলেকে শেখায় কান্না না করতে। কেননা কান্না হচ্ছে মেয়েদের কাজ। এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ। ছেলেদের আরো ভয়ঙ্কর সব শিক্ষা দিয়ে বড় করা হয়। সমাজে নারীরা যদি বাস করে কারাগারে, তাহলে পুরুষেরা বাস করে একটি বাক্সে। বাক্সটি তাকে গড়ে তুলে পুরুষ হিসেবে, মানুষ করতে পারে না। সে জন্মের পর থেকেই প্রশিক্ষিত হতে থাকে এই বাক্সের নিয়ম অনুযায়ী। যাতে বলা আছে তুমি পুরুষ, তোমার কাঁদা চলবে না, রাগ ছাড়া কোনো আবেগের প্রকাশ তোমাকে মানায় না, নারী থাকবে তোমার অধীনে, নারীকে অধীনস্ত করার মাধ্যমে প্রকাশ পাবে তোমার পুরুষত্ব। যে পুরুষ এর বিপরীতে যায়, সে ধর্ষিত হয়, মানসিক ভাবে। তাকে সবাই চিহ্নিত করে পুরুষত্বহীন হিসেবে। যদিও শারীরিকভাবে অন্য পুরুষের সাথে তার কোনো পার্থক্য নেই। সমাজে মেয়েদের পোশাক, পছন্দের রঙ, প্রসাধনী আলাদা করা আছে। পুরুষের এসব পছন্দ করাও পাপ। তার এসব পছন্দ হল মানে সে তার পুরুষত্ব হারালো। তাই পুরুষের মানুষ হওয়ার চেয়ে ‘পুরুষ’ হওয়াটা অনেক বেশী জরুরি। এতে যদি তাকে বিবেকহীন হতে হয়- সমস্যা নেই। বেলুন হারিয়ে গেলে তার কাঁদা চলবে না।

Loading

বয়ঃসন্ধি ও মা

বয়ঃসন্ধি একটা সাংঘাতিক সময়। আপনার মেয়ে বা ছেলে আপনার চোখের সামনে বদলাবে। আপনি চাইবেন তাকে অভ্যস্ত চোখে শিশুর মতন দেখতে কিন্তু প্রকৃতি তো তার নিয়মেই চলবে। পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক ভাবে নিন। সন্তানের পাশে থাকুন। এ সময়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা টান আসবে, এটা স্বাভাবিক। বন্ধুত্ব হতে দিন। প্রেম ভালবাসার যে শুধু শরীরের বিষয় নয়, মানসিক পরিপক্কতার জন্য অপেক্ষা করতে হয় এর জন্য সেটা বলুন সন্তানকে। প্রকৃতির খামখেয়ালি আপনার শিশু ভাল ভাবে চেনে না বলে কখনো কখনো সে নিজেকে অপরাধি ভাবতে পারে।

Loading