সূর্য ঘড়ি

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাদের অধিকাংশেরই যে জিনিসটা জানতে ইচ্ছে করে তা হলো-‘কয়টা বাজে’! এই আধুনিক যুগে মোবাইল, ঘড়ি আর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমাদের যেকোনো সময় সঠিক সময়টি বলে দেয়। কিন্তু আজ থেকে অনেক বছর আগে সময় দেখাটা এতটা সহজ ছিল না। তখন সময় জানার জন্য ব্যবহার হতো ‘সূর্যঘড়ি’! সূর্যের আলোর সাহায্যে যে ঘড়ির সময় নির্ণয় করা হয় তাই সূর্যঘড়ি। সূর্যঘড়িই হলো পৃথিবীর প্রথম প্রকৃতি নির্ভর ঘড়ি। আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বছর আগে মিশর ও ব্যাবিলনে এর উৎপত্তি হয়েছিল। মিশরে আরো বালির ঘড়ি, আগুন ঘড়ি, পানি ঘড়ির ব্যবহার থাকলেও সূর্যঘড়ির ব্যবহারই সবচাইতে বেশী বিস্তৃতি লাভ করে। আর ১৪’শ শতাব্দীতে এসে ইউরোপীয়রা এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কার করে। আজ যে যান্ত্রিক ঘড়ি আমরা দেখতে পাই,পরোক্ষভাবে এর পেছনে অবদান কিন্তু সূর্যঘড়িরই!

ঢাকার বলধা গার্ডেনের সূর্যঘড়ি

সাধারণ নকশার সূর্যঘড়ি যেমন অনুভূমিক সূর্যঘড়িতে সময়-নির্ণায়ক শৈলী হিসেবে প্রায়ই ধারালো প্রান্তবিশিষ্ট একটি চিকন রড থাকে। সূর্যের আলোয় সূর্যঘড়ির পৃষ্ঠতলের ঘণ্টা-নির্দেশক রেখাগুলোতে সময়-নির্ণায়ক শৈলীর ছায়া পড়ে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সূর্য যখন আকাশ বরাবর পশ্চিম দিকে সরতে থাকে, সময় নির্দেশক শৈলীর ছায়া-প্রান্তটিও তার সাথে সাথে বিভিন্ন ঘণ্টারেখায় অবস্থান করতে থাকে। তার পাশে আরো একটি ছোট আকৃতির মিনিট নির্দেশক রয়েছে। এটিও সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। সঠিক সময় নিরূপণের জন্য, সূর্যঘড়িকে অবশ্যই পৃথিবীর আবর্তনের অক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অধিকাংশ ডিজাইনেই, সময়-নির্ণায়ক শৈলীকে অবশ্যই স্বর্গীয় উত্তরমুখী ( স্বর্গীয় উত্তর মেরু বলতে নক্ষত্রের হিসাবে উত্তর বোঝায়, চৌম্বকীয় উত্তর নয়) হতে হয়। তাই, সময়-নির্ণায়ক শৈলীর অনুভূমিক কোণ সূর্যঘড়ির ভৌগোলিক অক্ষাংশের সমান হওয়া আবশ্যক। তবে এই ঘড়ি সূর্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় রাতের বেলা সময় দেখাতে পারে না। তাছাড়া দিনকে বারো ঘন্টায় ভাগ করে দাগ দিয়ে রাখলেও তা সবসময় ঠিক থাকে না। কারণ বছরে সবসময় দিন সমান থাকে না।
এ ঘড়ির কাঁটা নেই, টিকটিক শব্দ নেই, নেই কোনো ব্যাটারি বা কাঁটার অবিরত ছুটে চলা। তবু সময় দেখায় প্রায় নিঁখুত ভাবে! ঢাকার বলধা গার্ডেনের সূর্যঘড়ি টি এখনো আমাদের মনে করিয়ে দেয় মিশরীয় ও ব্যবিলনিয় সভ্যতার কথা।রাজধানীর বলধা গার্ডেনে অবস্থিত সূর্যঘড়িসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, ঘন্টা থেকে দিন। এমনি করে চলে যাচ্ছে মাস, বছর, যুগ। সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে এরকম হাজারো ঐতিহ্য। তাই বিলুপ্তপ্রায় এই ঘড়িটি দেখতে চাইলে চলে যেতে পারো বলধা গার্ডেনে, কিংবা ইউটিউব দেখে নিজেই বানিয়ে নিতে পারো ছোটখাটো একটা সূর্যঘড়ি।একদিনের জন্য এই ঘড়ি ব্যবহার করে প্রাচীন যুগের স্বাদ পাওয়া-সেটাই বা মন্দ কি!

লেখক; শিক্ষার্থী, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, ঢাকা।

Loading

Leave a Comment