বাস, মফস্বল, বন্ধুগণ – এইসব

মীম আরাফাত মানব

একটা বাসের, একেকটা বাসের, রাজা সিটি আর এটিসিএলের মত একেকটা বাসের জানলা গলে মাঝে মাঝে মফস্বল ঢুকে বসে থাকে মাঝরাস্তায়।

আমি আর আমার বন্ধু একজন খাওয়াদাওয়া সেরে বাসের রড ধরে ঝুলে থাকি, রোদে শুকাতে হবে যেনো নিজেদের, আমি ঝুলে ঝুলে তার সাথে গল্প জমাই, কিছুটা ইমপ্রেস করতেই, কিছুটা কিছু বলতে হয় বলে, এইসব দুই কথা, চার কথা হয়ে — আমি ওরে বলি, বুঝছ, বুঝো ব্যাপারটা, যতই দৌঁড়াও তুমি পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় আর উত্তর আমেরিকায়, মফস্বলের গন্ধ ছেড়ে কই যাইবা তুমি আবীর মাহমুদ — এইসব কথা যে মুখ থেকে গড়ায়ে পড়বে কারো জুতার তলায়, তার মাঝেই আমি হটাত করে দেখি, ঐ যে দেখো, দেখি যে বাসের ভেতরে চেহারাগুলা আসলেই মফস্বল থেকে তুলে আনা অবিকল, অইরকম পলেস্তারা ঘষটে পড়ে ছাত থেকে, অইরকম নতুন আসা পানির লাইন, দুই সীটের মাঝে ঘিঞ্জি গলি, আমি দেখি যে এর মাঝে, আমি তুমি দুইজনেই দেখি এর মাঝে দুই চারটা শহরের চেহারাও দেখা যায়, দাদা-বাড়ি এসেছে, বা পথে গাড়ি বসে গেছে বলে, বা ফেসবুক বন্ধুর পত্রপাঠ সোজা চলে এসেছে বলে, আমাদের বাদবাকী বন্ধুগুলি অব্দি টুরিস্ট, দেখছ, দেখছ তুমি অইগুলিরে, দেখতে এসেছি ছোট্টো শহর, আপনাদের শহর যে কী সুন্দর না, ঠিক যেনো প্যাস্টেলে আঁকা, ঠিক যেনো পেন্টিং, কিন্তু বাপ, এটিসিএলের ভেতরে যে দেখার কিছু নাই — তারা হাসে এই জন্য, কথা বলার ভান ধরে, কাঠের বাক্সের উপরে বসে, যেই বেটা দাঁড়ায় আছে সে অনভ্যস্ত হাতে নতুন কেনা ফোন হাতড়ায়, আর ঘুরান্টি খায় পায়ের উপর, ব্যস্ত রাখতে হবে যে নিজেদের — টুরিস্ট সব কয়টা – আমি তখন দেখবো, দেইখো তুমি, বার্থডে বয়, ঝিম ধরে ছিলো সবাই, শিকড় ছড়ায়েছে অর্জ্জুন, ঝিম ধরে বসে আছে সবাই, অর্জ্জুন উঠে যাচ্ছে, কর্ণেল বটগাছ নিড়ানি হাতে প্রস্তুত, উঠে যাচ্ছে চাপকল, এইসব ছেড়াখোড়া মফস্বল, এই বাস ছেড়ে —

হটাত করে এর মাঝে দেখি আমার বন্ধু আমার সব কথা মাঝপথে ফেলে রেখে নেমে গেছে — আস্ত মফস্বল ছেড়ে গেছে এই বাসেরে — ও নামে নাই একা, মফস্বলের বানোয়াট সোয়াদটা অব্দি নেমে গেছে আমার কথাবার্তারে একছিট বেল না দিয়ে — আমার বন্ধু কী তবে মফস্বল, কেনো, একটু বড়, একটু নিষ্পাপ, ইনোসেন্ট চেহারা, চুলঢাকা চাঁদি, এইসব বলে — আমি তখন বুঝতে পাই না, কী করতে হয় এরম হইলে, যখন মফস্বলের বদলে একরাশ শূণ্যতা পড়ে থাকে, আর আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে শহর, অই জায়গাতে, একটু একটু করে, বা ঢুকে পড়ে না কেউ, ফাঁকা পড়ে থাকে শূণ্যতা, তখন কী করতে হয়, কী করতে হয় তখন — অই দূরে বন্ধুরে দেখা যায় তার বন্ধুদের নিয়ে উলটা ফিরে দাঁড়ায় আছে, সিটি কলেজের মাথায়, মফস্বল এখন অন্য কোথাও, এদিকে বাস ছুটে যাচ্ছে, তারে যাইতে হবে শাহবাগ হয়ে মতিঝিল, তারপরে ফের শাহবাগ আবার।

এইসব বাস, আর কাউরে, মফস্বল প্যারিস সিঙ্গাপুর সোহাগী, এরকম আর কাউরে ধারণ করবে বলে, আবারো একেকদিন খালি পড়ে থাকে। খুব ভোরে, খুব দুপুরে-রাতে, খুব দিনেরবেলায়। ঠিক যেনো আনন্দ সিনেমা হল।

৮ ১২ ১৫, ১৫ ০০ – ১৯ ০০।

প্রচ্ছদের ছবিতে ঢাকা শহরকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি লেখকের তোলা। লেখাটাও তার ব্যক্তিজীবন থেকেই মেরে দেয়া।

Leave a Comment