স্টোনহেঞ্জ রহস্য

পৃথিবীতে যত অমীমাংসিত রহস্য রয়েছে তাদের মধ্যে স্টোনহেঞ্জ অন্যতম । এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ , কবরস্থান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। স্টোনহেঞ্জ স্থাপনাটি ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের স্যালসবারির প্রায় ৪ মাইল দূরে স্যালসবারির সমভূমিতে অবস্থিত। এটি নবপ্রস্তরযুগীয়কালে নির্মিত হয়। নবপ্রস্তরযুগ বলতে নতুন পাথরের যুগ থেকে ব্রোঞ্জ যুগের সময়কালকে বোঝানো হয়েছে। এই সৌধ ত্রিশটি কাড়া পাথরের স্তম্ভ দিয়ে তৈরি।

স্টোনহেঞ্জে মূলত দুই প্রকারের পাথরের উপস্থিতি আছে। বড় পাথরগুলোর নাম সারসেনস ( sarsens) এবং ছোট পাথরগুলোর নাম নীল পাথর (bluestone) । স্টোনহেঞ্জের নির্মাণ হয়েছে তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপ প্রত্নঐতিহাসিক যুগের চেয়ে ১ হাজার বছর আগে শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপে খ্রিস্টপূর্ব ২১৫০ সালে ২২৫ মাইল দূরের দক্ষিণ ওয়েলস থেকে প্রায় ৮২টি পাথর টেনে আনা হয় যা ধারণা মতে অসম্ভব বা অবিশ্বাস্য মনে করেন অনেকের। শেষ ধাপে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে সারসেনসগুলো আনা হয় এবং পূর্ণ বিন্যাস করে বর্তমানে বৃত্তাকারে সাজানো হয়।

সভ্যতার ইতিহাসে আমরা অনেক স্তম্ভের সাথে পরিচিত হয়েছি । কিন্তু স্টোনহেঞ্জের রহস্য অন্যগুলো থেকে আলাদা ও অস্পষ্ট। এই স্টোনহেঞ্জ কেন বা কারা তৈরি করেছে, কোন পদ্ধতিতে তৈরি করেছে তা এখনো কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না। স্টোনহেঞ্জে মানা হয়েছে জ্যামিতিক নিয়ম। স্তম্ভটির পাথরগুলোর উচ্চতা ৪.১ মিটার যেগুলোর প্রতিটি জোড়ার ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট পাথর যার উচ্চতা ৩.২ মিটার উত্তরমূখী করে বসানো । পাথরের সারির মাঝে মাঝে ব্লুস্টোনগুলো অবস্থিত যা বৃত্তাকার পথটি পূরণ করে।

 

এটা বিশ্বাস করা খুবই দুরূহ যে এত বড় বড় পাথর কিভাবে মানুষগুলো টেনে আনলো বা এর সত্যতা কতটুকু তাও নিশ্চিত নয় কেউ । ১৭০০ শতাব্দীর দিকে মনে করা হত ক্যাল্টিক ধর্মযাজকেরা এই ঐতিহাসিক স্থাপনা তৈরি করেছিলেন যাদের ড্রুইড বলা হয়। ড্রুইডদের নানান অলৌকিক শক্তি থাকার কারণে এরকমটা ভাবা হয়। কিন্তু তাদের সম্পর্কে যথার্থ তথ্য না থাকায় তা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে নি। সেসময় স্থাপত্যবিদ ইনিগোজোনসের ধারণা এটি রোমানদের কাজ। আবার অন্য কারো মতে এটি মিসরীয়দের কর্ম।

কিন্তু এগুলোর কোনটারই যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না। ১৮০৮ সালের দিকে প্রত্ন সংগ্রাহকরা স্টোনহেঞ্জের চারপাশে প্রাচীন কবর থেকে ব্রোঞ্জের অস্ত্র, সোনার অলংকারসহ হাড়ের স্তূপ খুজে পাওয়া যায়। তারপর ধারণা করা হয় এটি ধর্মশালা নয়, এটি সমাধিস্থল। এই অস্ত্র, অলংকার ও হাড়ের স্তূপ গবেষণার পর কেউ কেউ বলেন এই স্থাপনা বহিরাগতদের করা। এটিকে কেউ ধর্মশালা বা কেউ সমাধিস্থল ভাবলেও এখানে আছে আরেকটি মজার ব্যাপার। স্টোনহেঞ্জের আশেপাশে শস্যের মাঠে অন্যরকম একধরনের গোলাকৃতি ছাপ দেখে অনেকে মনে করেন এটা এলিয়েনদের তৈরি। তারা তাদের প্রয়োজনে তাদের যান নিয়ে এখানে আসত যার কারণে এই ধরনের গোলাকৃতি ছাপ পাওয়া গেছে।

আবার কেউ এটিকে যাদুঘর বলছে আবার আরেকদল বলছে এটি শনিগ্রহের কক্ষপথ । ১৯০১ সালে স্যার নরম্যান ও ১৯৬৩ সালে জেরাল্ড হকিন্স আবিষ্কার করেন যে স্টোনহেঞ্জ দিয়ে নাকি সূর্যের গতিপথ পর্যবেক্খন করা যেত। ঘটনা যাইহোক দর্শনার্থীদের কাছে স্টোনহেঞ্জ অপার সৌন্দর্যের স্থান। ১৯৮৬তে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেয় স্টোনহেঞ্জকে।

 

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Loading

Leave a Comment