আলোর গতিতে ইন্টারনেট

নগরজীবনে অনেক বাড়িতেই এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ আছে। তারই বদৌলতে Wi-Fi এর সাথে কমবেশি পরিচিত আমরা। তাছাড়া সরকার মহাশয়ও জায়গায় জায়গায় Free Wi-Fi Zone তৈরী করে দিয়েছেন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার প্রসারের জন্য। সে তুলনায় Li-Fi শব্দটি আমাদের কাছে নতুনই বটে।

Li-fi মূলত Wi-Fi এর মতোই ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি মাধ্যম। Li-fi এরপূর্ণরূপ Light Fidelity। জার্মান প্রাণীবিজ্ঞানী হ্যারেন্ডহাস প্রথম এই প্রযুক্তির কথা চিন্তা করেন।

এখন কথা হচ্ছে, Li-Fi জিনিসটা কাজ করে কিভাবে? এখানে মূলত লাইট বাল্বকেই ওয়্যারলেস রাউটার হিসেবে কাজে লাগানো হয়। Wi-Fi তে যেখানে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ করা হয়, Li-Fi তে সেখানে আলোক তরঙ্গ ব্যবহার করেতথ্য প্রেরণ করা হয়। বেতার তরঙ্গের চেয়ে আলোক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক প্রায় দশ হাজার গুণ বেশি হওয়ায়, এই Li-Fi, Wi-Fi এর চেয়ে প্রায় দশ হাজার গুণ দ্রুত গতিতে তথ্য প্রেরণ করতে পারে!

মূল কথা হচ্ছে, আলোর অসাধারণ গতিকে কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার প্রযুক্তিই Li-Fi। Li-Fi এর জন্য আমাদের ব্যবহৃত এনার্জি, টিউবলাইট এসবের পরিবর্তে বিশেষ LED বাল্ব ব্যবহার করতে হবে। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, Li-Fi এর ক্ষেত্রে কি ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য দিনরাত লাইট জ্বালিয়ে রাখা লাগবে?! উত্তর হল- ‘না’। ফ্যানের রেগুলেটরের মতো রেগুলেটরের মাধ্যমে LED-এর আলোর উজ্জ্বলতা বাড়ানো-কমানো যাবে! এমনভাবেই কমানো যায় যাতে দেখে মনে হয়, লাইটটি অফ! আর এতে ইন্টারনেটের গতিও কম-বেশি হবে না।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গতির ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতে (100 Mbps)। আর Li-Fi-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তার গতি প্রায় 224Gbps পর্যন্ত যাবে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এমন তথ্যই জানিয়েছে। বর্তমানে এস্টোনিয়াতে কয়েকটি অফিসে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Li-Fi নিঃসন্দেহে একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি। একদিকে যেমন সমস্ত লাইট হটস্পট হিসেবে কাজ করবে, তেমনি তথ্য পাচার এর ঝুঁকিও নেই! কারণ, এক রুমের আলো আরেক রুমে যেতে পারেনা! আবার, অনেক বড় তথ্যও দ্রুত গতিতেই প্রেরণ করা যাবে। তবে এই লাইট প্রযুক্তি কদ্দুর যেতে পারে তাই এখন দেখার বিষয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইআইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Loading

Leave a Comment