ভালোলাগার বই – “প্রথম আলো প্রথম খন্ড”

“সব ছাপিয়ে, এই উপন্যাসেরও মূল নায়ক-সময়।
তীর সামনে ছুটে যাবার আগে কিছুটা পিছিয়ে যায়। বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে আগিয়ে যাবার পথে যে-কোণও সমাজের মাঝেমাঝে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দিকে পিছু ফিরে দেখা দরকার। আমাদের দেশের অনতি-অতীতের পুনর্দশন ও পুনর্বাচার নিয়েই ‘প্রথম আলো’ ।”
প্রথম আলো প্রথম খন্ড। বাংলার সমাজে নতুন এক সকালের প্রথম আলোই বলতে হয়। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে আম্মুর পুরনো বইয়ের ধূলো ঝেড়েই বইটা আবিষ্কার করা। আর দেরি করিনি। সঙ্গে সঙ্গেই পড়া শুরু করে দিয়েছি।
বলতে হয়, হারিয়েই গেছিলাম। নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম মহারাজ বীরচন্দ্রের ত্রিপুরায়, পাহাড় ঘেরা সবুজে ভরা বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে ঘেরা সেই স্বাধীন রাজ্যে, যেখানে কিনা ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তার তখনও শুরু হয়নি। কখনো কল্পনা করেছি নিজেকে ঠাকুরবাড়ির বারান্দায়, আমি যেন এক অদৃশ্য মানবী, সবই দেখছি, কিন্তু কেউ আমায় দেখছেনা। তাদের হাসিতে হাসছি, কান্নায় কাঁদছি। কাদম্বরীর ছেলেমানুষি ভালোবেসে তাঁর জীবনযাপনে নিজেকে খুঁজেছি কখনো কখনো। ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনেরও ধ্রুবতারা’ – গানটাকে একদম ভালোবেসে ফেলেছি বইটা পড়ে।
বিনোদিনী – গিরীশের নাট্যদলের জাগরণী সংলাপের মাধুর্যের স্বাদ আস্বাদন করেছি। রামকৃষ্ণের কাহিনীতেও মনোযোগ দিয়েছি। এ যেন আসলেই সেই শতকে ডুবে যাওয়ার অনুভূতি! এই বইটি পড়ে আমার তেমনই লেগেছে। বিশাল আকৃতির এই বইটি বিন্দুমাত্র বিরক্তি ধরায়নি। প্রতিটি লাইনে লাইনে ছিল ভালোলাগা।
তবে, বইটির শেষে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি। কেননা, এত এত বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্রের ভিড়েও আমি মগ্ন ছিলাম দু’জন সাধারণ মানুষে। এর একজনের নাম ভরত, অন্যজনের নাম ভূমিসূতা।
ভরত আর ভূমিসূতা এই দুটি চরিত্র সব ছাপিয়ে উপন্যাসের গতি এনে দেয়। আর পাঠককে বাধ্য করে দ্বিতীয় খন্ড পড়তে। আমারও হয়েছে একই দশা। প্রথম খন্ড পড়ার পর রীতিমত দমবন্ধ হয়ে আসছিল দ্বিতীয় খন্ডের জন্য! কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে সুনীলের প্রকাশ্য দিবালোকে পড়ে ফেললাম। এরপরে এই দীর্ঘ ছুটিতে পড়া হয়েছে আরো অনেক বই-ই। কিন্তু এই প্রথম আলোর রেশটা কাটেনি। বারবার পড়তে ইচ্ছে হয়েছে। বারবার খুঁজেছি দ্বিতীয় খন্ড।নানান ঝামেলায় যোগাড় হয়নি!
আমি আবার একটু সেকেলে মানুষ। কাগজের বই ছাড়া আমার মন ভরেনা! তাও নিতান্তই বাধ্য হয়ে অজানা এক মোহে পিডিএফ নামিয়েই অবশেষে শুরু করতে যাচ্ছিলাম প্রথম আলো দ্বিতীয় খন্ড! পরে অবশ্য কলেজ লাইব্রেরিতেই পেয়ে গিয়েছিলাম। দিয়েছিলাম ভরত-ভূমিসূতা-বীরচন্দ্র মাণিক্য-ঠাকুরবাড়িতে আরো একবার ডুব। সে গল্প নাহয় আরেকদিন বলবো!

Leave a Comment