জেমস পটার এবং উপেক্ষিত উপাখ্যান

শরীফুল ইসলাম

শিক্ষার্থী

জেমস পটার সম্ভবত সবচেয়ে আন্ডাররেটেড জাদুকর। পুত্র হ্যারি পটারের খ্যাতি কি জেমস কে আড়াল করে দিয়েছে? অথবা সেভেরাস স্নেইপের সাথে তিক্ত মনস্তাত্ত্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা? কেনো জেমস সংক্রান্ত আলোচনায় কারো আগ্রহ নেই? অথচ সবচেয়ে এনার্জেটিক আর প্রতিভাবান জাদুকরদের একজন ছিলেন তিনি।

ফ্ল্যামন্ট এবং ইউফেমিয়া পটার যখন সন্তানের আশা একেবারেই ছেড়ে দেন সেই সময়ে এই বুড়ো দম্পত্তির ঘরে জেমস জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফ্ল্যামন্ট একজন ধনী পোশন ব্যাবসায়ী ছিলেন। কাজেই জেমস ছিলেন যাকে বলা হয় ‘রিচকিড’। ‘গডরিচ হলো’ তে বিলাসিতায় বড় হওয়া জেমস ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন প্যাশনেট, সুদর্শন, চ্যালেঞ্জ প্রিয় এবং এরোগ্যান্ট।

হোগোয়ার্টসে গিয়ে গ্রিফিন্ডরে সর্টেড হন জেমস। গ্রেটহলে দেখে পেয়ে যান আরো দুই বখাটে সিরিয়াস ব্ল্যাক এবং রেমাস লুপিনের। তাদের সাথে এসে যুক্ত হয় অপেক্ষাকৃত বোকা পিটার পেট্টিগ্রু। তারা কজন একত্র হয়ে যে গ্যাং তৈরী হয় তার নাম হয় ‘মারউডার্স’। মারউডার্সরা তৎকালীন হোগোয়ার্টসের হোমড়াচোমড়াদের হিংসার পাত্র ছিলো, যাদের অগ্রভাগে ছিলেন সেভেরাস স্নেইপ। হোগোয়ার্টসে গ্রিফিন্ডর কুউইডিচ টিমে চেজার হিসেবে যোগ দেন জেমস। কুইডিচ খেলায় তার পারদর্শীতা গোটা স্কুলে তাকে তারকায় পরিণত করে। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় সিরিয়াস, জেমস এবং পিটার আবিষ্কার করেন যে রেমাস একজন ওয়্যারউলফ, প্রতি চাঁদনী রাতে রেমাস তার মানুষরূপ থেকে এনিম্যাগি রূপ ধারণ করে। এই আবিষ্কারের ফলে তারা রেমাসকে দূরে ঠেলে না দিয়ে বরং নিজেরাই এনিম্যাগি হওয়ার প্রাক্টিস শুরু করেন এবং প্রত্যেকেই বিভিন্ন আকৃতিতে রূপান্তরিত হতে সক্ষম হন। মারউডার্সরা কিছুদিনের মাঝে একটা ম্যাপ তৈরী করে যাতে ভূত, সকল স্টুডেন্ট এবং টিচারদের গতিবিধি অনুসরণ করা যেতো, যার নাম দেয়া হয় ‘মারউডার্স ম্যাপ’।

স্কুলজীবন জুড়ে শো অফ প্রিয় জেমস চুল ঝাকড়ে লিলি পটারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা এবং জাকজমক নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। হেক্সিং এ জেমস এর সহজাত দক্ষতা ছিলো কিন্তু বিনা কারণে যাকে তাকে হেক্স করা তার বদভ্যাসে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে তার প্রিয় ভিক্টিম ছিলো সেভেরাস স্নেইপ। স্নেইপ এবং জেমস পটারের দ্বৈরথ ছিলো তিক্ততায় ভরা। রেমাস এবং সিরিয়াসের মতে, তাদের মধ্যে এই দ্বৈরথের কারণ ছিলো জেমসের জনপ্রিয়তা, কুইডিচে দক্ষতা এবং কালোজাদুর বিরুদ্ধে দক্ষতা যেটা স্নেইপকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। অবশ্য পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পারি যে স্নেইপের ব্যাপারে জেমস এবং সিরিয়াসের বিবেচনা প্রথম থেকেই নেতিবাচক ছিলো যার শুরু হয় হোগোয়ার্টস এক্সপ্রেসে স্নেইপকে ইনসাল্ট করার মধ্য দিয়ে। অবশ্য স্নেইপ ও সবসময় মারউডার্সদের পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকতো যাতে হোগোয়ার্টস থেকে তাদেরকে এক্সপেল করার মতো সুযোগ পাওয়া যায়। ফলাফল স্বরূপ জেমস দেখামাত্রই স্নেইপের উপর হেক্স করতো। কিন্তু একবার স্নেইপ তাদেরকে ফলো করতে গিয়ে হোমপিং উইলো গাছের কাছে চলে আসে, যেখানে এসে লুপিন ওয়ারউল্ফে পরিণত হয়। জেমস এসময় স্নেইপকে দেখে ফেলে এবং জীবনের রিস্ক নিয়ে ওয়ারউল্ফ লুপিনের হাত থেকে তাকে বাঁচায়। স্নেইপ এ ব্যাপারটাকে কখনো স্বীকার করেনি প্রিয় শত্রু জেমস তার জীবন বাঁচিয়েছে।

জেমস তার স্কুলজীবনের বড় অংশ কাটিয়েছে লিলি ইভান্সের পেছনে ঘুরে। লিলি ইভান্স ছিলো গোটা স্কুলের সবচে আকর্ষণীয় এবং মেধাবী মাগলবর্ণ উইচ।গোটা স্কুলে স্নেইপের পর লিলি ছিলো দ্বিতীয়জন যে জেমসের কুইডিচ, সুন্দর চুল আর হেক্স সমগ্রের প্রতি কনভিন্সড ছিলোনা। অন্যদিকে লিলি ছিলো স্নেইপের ছেলেবেলার ক্রাশ এবং সিক্রেট বেস্ট ফ্রেন্ড। কাজেই লিলিকে নিয়ে স্নেইপ জেমস এর প্রতি এক মনস্তাত্বিক যুদ্ধে মেতে উঠে। এরই মাঝে একদিন স্নেইপ কে হেক্স করা অবস্থায় লিলি এসে স্নেইপ কে ছেড়ে দেয়ার আর্জি জানালে জেমস তার বিনিময়ে লিলিকে ডেটের অফার করে। ক্ষিপ্ত স্নেইপ লিলিকে ‘মাডব্লাড’ বলে গালি দিলে লিলি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। লিলিকে নিয়ে এভাবে নতুন নতুন দৃশ্যায়ন জেমস এবং সিরিয়াসের মধ্যে জন্ম দেয় নতুন সাগা , যা পরবর্তীতে স্থায়ী শত্রুতায় রূপ নেয়।

ষষ্ঠ বছরে পড়াকালীন সময়ে সিরিয়াস তার ‘হরিবল’ টাইপ পরিবার ছেড়ে জেমস এর বাড়িতে চলে আসে এবং স্থায়ীভাবে বাস কর‍তে শুরু করে। জেমস এর বাবা মা সিরিয়াসকে নিজেদের ছেলের মতো দেখতেন । সপ্তম বছরে জেমস ‘হেডবয় ‘নির্বাচিত হয়। কারণে অকারণে হেক্স করে বেড়ানোর অভ্যাস, বারবার চুলে হাত বুলানো, সবাইকে ইম্প্রেস করে বেড়ানোর অভ্যাস ছেড়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত লিলি ইভান্স তার প্রপোজাল গ্রহণ করে নেয়। এ সময়টায় স্নেইপ এর আচরণ ছিলো অনেকটাই রহস্যে ঘেরা। লুসিয়াস ম্যালফয় সহ আরো কিছু তরুণ বিপদগামী জাদুকরের সাথে স্নেইপ চলাফেরা শুরু করে। লুসিয়াস ম্যালফয় সহ আরো কিছু বিপদগামীদের সাথে সে ‘ডেথইটার’ সংঘে যোগদান করে।ফলে লিলির সাথে যোগাযোগ পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, লিলি জেমস কে নিয়ে প্রথমবারের মতো তার বোন পেটুনিয়ার এবং ভার্নন ডাডলের সাথে দেখা করতে যায়। ভার্নন যখন নিজের বড় গাড়ি আর চাকরীর কথা বলে, একই সময় জেমস গ্রিংগটের ভোল্টে তার কয়েনের পরিমান বলে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে। ডাডলে এসব জাদু পরিভাষায় ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠে এবং রেগে ওখান থেকে চলে যায়। এভাবে বিব্রতকর ভাবে এই উভয় কাপলের মিটিং এর সমাপ্তি ঘটে।

হগোয়ার্টস সমাপ্তির পর মাত্র আঠারো বছর বয়সে জেমস পটার এবং লিলি ইভান্স বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এসময় অন্যান্য মারউডার্সরা উপস্থিত থাকে। ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা লর্ড ভল্ডেমর্ট এবং ডেথইটারদের বিরুদ্ধে ‘ফার্স্ট উইজার্ডিং ওয়ার’ এ জেমস, লিলি, পিটার, রেমাস এবং সিরিয়াস অর্ডার অফ ফিনিক্সে যোগ দেয়। পরপর তিনবার এই দম্পত্তি লর্ড ভল্ডেমর্টের সাথে লড়াই করে ফিরে আসে অতীতে যা অন্য কোনো জাদুকর করতে পারেনি।

বাবা-মা মারা যাওয়ার পর জেমস তাদের বিশাল সম্পত্তির মালিক হন। জেমস আর লিলি বেশ ভালো পরিবার জীবন কাটাচ্ছিলেন। এসময় লুপিনকেও তারা অর্থ দিয়ে সাপোর্ট করতেন। কিছুদিনের মাঝে লিলি প্রেগন্যান্ট হন এবং হ্যারি পটারের জন্ম হয়। একি সময়, ট্রেলওয়েনে হোগোয়ার্টস এ চাকরী নিতে এসে এমন একটা প্রফেসি করে বসে যা স্নেইপ শুনে ফেলে। এই প্রফেসি ছিলো ডার্কলর্ডের ধংস নিয়ে। অনুগত ভৃত্যের মতো স্নেইপ, তার লর্ড কে সেটা বলে দেয়। অন্যদিকে, ফিডেলিয়াস চার্ম এর সাহায্যে লুকিয়ে থাকা পটার দম্পত্তির সিক্রেট কিপার সিরিয়াস ব্ল্যাক, পিটার পেট্টিগ্রুকে সিক্রেট কিপার বানানোর জন্য পটার দম্পত্তিকে পরামর্শ দেয়। কিন্তু নিয়তি ভিন্ন কিছু ছিলো। পিটার পেট্টিগ্রু ভল্ডেমর্ট কে সিক্রেট বলে দেয় এবং ভল্ডেমর্ট তাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়। জেমস এর হাতে ওয়ান্ড না থাকায় বিনা যুদ্ধে জেমস এর মৃত্যু হয় আর লিলি? লিলিকেও একি পরিণতি ভোগ করতে হয়েছিলো। অবশ্য মৃত্যুর আগে লিলি এমন সুরক্ষা দিয়ে যায় তার ছেলেকে যা লর্ড ভল্ডেমর্ট কে ধ্বংস করে দেয়। সেই সুরক্ষার নাম ভালোবাসা!

Leave a Comment