কফিনের বাসিন্দাদের কথা

একটা জরাজীর্ণ দালান, তার মাঝ বরাবর বিশাল একটা হলঘরে সারি সারি কফিন। একেকটা কফিনের ভেতর শত শত মানুষ। কিংবা কে জানে, হয়ত লাখ… কোটিও ছাড়াতে পারে। তাদের চোখে রঙিন চশমা, কফিনের ভেতরটা বড্ড ভাল লাগে তাদের। এর থেকে সুন্দর জায়গা নাকি আর হয়ই না! কফিনের ভেতর সুর বাজে, ভীষণ আনন্দের সুর। সবাই এই কফিনের পাহারাদারের জয়জয়কার করে।

মাঝেমধ্যে দূর থেকে কাদের যেন আর্তনাদ ভেসে আসে, কফিনের বাসিন্দারা নড়েচড়ে বসে। তাদের বুকের মাঝে কাঁপন ধরে৷ মাঝে মধ্যে ভেসে আসে বেহালার করুণ সুর৷ মানুষগুলোর কান্না পায়। একটু কেঁদেও ফেলে কেউ কেউ৷ তারপর তারা আবার ভাবে ওসব ত দূরের..বহু দূরের। আমাদের কী বা এসে যায়? তারা জয় জয় রব তোলে কফিনের পাহারাদারের। কারণ তারা ভাল আছে।

কখনো কখনো খুব কাছে কোথাও পেরেক ঠোকার শব্দ আসে, তাদের কফিনের বাইরে থেকেই কি? কফিনের কয়েকজন উৎসুক বাসিন্দা খোঁজ নিতে বেরোয়, তারা আর ফিরে আসে না, তাই কেউ ঠিক করে জানতেও পারে না শব্দের উৎস। কেউ কেউ ফিরে আসে, কিন্তু তারা আর কথা বলে না, যেন তারা সদ্যোজাত শিশু৷ যেন তাদের মস্তিষ্ক শূন্য। যেন তাদের মস্তিষ্কে কোনো কিছুর কোনো স্মৃতিই নেই। ভয়, ভালোবাসা, দুঃখ, স্বপ্ন কিছুই না, কিছুই না…

কেউ কেউ আর্তনাদ করে, কেউ কেউ ফুঁসতে থাকে, গুমোট হয়ে থাকে চারপাশ। তারপর আবার রব ওঠে – জয় কফিনের পাহারাদারের জয়! ঢাক বাজে, বাজে ট্রাম্পেট। আর বেহালার সুর চাপা পরে যায়, চাপা পরে যায় ওই পেরেক ঠোকার ঠক ঠক শব্দটাও!

তারপর একদিন ঝড় আসে, অদৃশ্য ঝড়, কিছুই দেখা যায় না, তবে কফিনের ডালাগুলো নড়ে ওঠে, ডালার ফাঁক দিয়ে কফিনের বাসিন্দারা দেখে কফিনগুলো কোনো মার্বেল পাথরের মেঝেতে নয়, মড়ার খুলির ওপর রাখা…

তারা বুঝতে পারে না কী করবে..কফিনের পাহারাদারের কাছে জবাব চাইবে, নাকি রঙিন চশমা চোখে দিয়ে দেখবে চোখ ধাঁধানো রং আর কফিনের ভেতরের দেয়ালের কারুকাজ, নাকি একটানা অসহ্যরকম ভাবে বেজে চলা বেহালাগুলো মাটিচাপা দেবে। তারা বড্ড দোটানায় পরে, তারা আর ভাবতে পারে না, তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়৷ একদল বলে চলো কফিন ছেড়ে বেরিয়ে যাই, একদল বলে এই তো বেশ আছি, আরেকদল বলে আমরা এই কফিনে এলাম ই বা কেমন করে?

আর ওইদিকে ওই পেরেক ঠোকার শব্দটা প্রকট হতেই থাকে.. ঠক ঠক ঠক ঠক…। ওটা মৃত্যুর শব্দ? নাকি জন্মের? কে জানে!

4 thoughts on “কফিনের বাসিন্দাদের কথা”

  1. How “Kophiner paharadar” seems like , human or ….. ? Want to know and think about those two questions at the very end of the story.

    Reply
    • আপনার এই লেখাটা আমাদের ম্যাগাজিনে দিতে চাই, যদি না উক্ত ম্যাগাজিনের কোন সমস্যা না থাকে।
      ধন্যবাদ।

      Reply
    • আপনার এই লেখাটা আমাদের ম্যাগাজিনে দিতে চাই, যদি না উক্ত ম্যাগাজিনের কোন সমস্যা না থাকে।
      ধন্যবাদ।

      Reply