ছাদে উঠে গিয়ে

মীম আরাফাত মানব

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হতাশায় চোখ মুখ ফুলে গেলে আমাকে বসন্ত-রোগীর মত দেখায়, আমি তখন কাল বসন্ত ছাল বসন্ত করতে করতে ছাদে উঠে গিয়ে লাফ দেই রাস্তা বরাবর। আশা করে ছিলাম পড়তেই মরে যাবো, ঘিলু বেরিয়ে যাবে, কিন্তু ঘিলু বের হয়ে যাবার বদলে আমার সারা শরীর, মাথাটা তখন মাটি থেকে পাঁচ ফুট উপরে, পা দুইটা সাড়ে দশ ফুট, আমার সারা শরীর চরকির মত একটা ঘুরপাক খায়, আপনার দাদীর ব্যবহারের সেলাই মেশিনের চরকির মত, আমি তখন উলটা থেকে সিধা খাড়া হয়ে যাই। আমার উচ্চতা পাঁচ ফুটের থেকে সামান্য বেশি বলে পায়ে হোচট খেতে হয় উল্টাতে গিয়ে।

ঐ পা নিয়ে হাঁটতে পারতাম না, হাঁটতে হয়ও না, আমি দেখি আমার আশেপাশে অজস্র মানূষ, অজস্র না হলেও শ দেড়েক ত হবেই, শ দেড়েক মানূষ উড়ে উড়ে ভলিবল হ্যান্ডবল কাবাডি খেলে বেড়াচ্ছে, আমিও উড়তেছি তাদের ফাঁকে ফাঁকে। শোনা গেলো বীমা কোম্পানীরা অনেকগুলো আত্মহত্যাকে আত্মহত্যা প্রমাণ করতে না পেরে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র উল্টায়ে দিয়েছে, এখন আর কেউ ছাদ থেকে লাফ দিলে মরে না, ভেসে বেড়ায়। এই শ দেড়েক আদমী কি জীবনের এই ভেসে বেড়ানোর নিগূঢ় তথ্য আমার মতই লাফ দিয়ে মরতে গিয়ে আবিষ্কার করলো!

আমি তখন ভেসে ভেসে ঘরে যাই, অভ্যাস নাই যে বল খেলবো, তাছাড়া পায়ে ব্যথা, আমি বরং পূর্ববৎ ছাদে উঠে যাই, এবার রেলিঙে বসে আর কোনো উপায়ে মরে যাওয়ার কথা ভাবি, কিন্তু দেখা যাবে বন্দুক ঠেকাবো মাথায়, তারেও বলা থাকবে, হাত আর মাথার মালিক এক হলে সেফটি ক্যাচ অন করে দিও।

আমি তখন আরেকবার বহুকাল পরে তার কথা ইয়াদ করি, সে, যে মাঝে মাঝে দ্বীপে ঘুরতে যায়। আমার তখন এই বাসাটারেও একটা দ্বীপের মত মনে হয়, চারদিকে এত মানুষ, এত লোনাজল, অথচ তেষ্টা মেটানোর উপায় নাই আমার।

মাথার উপর দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ফেরেশতা উড়ে যায়, উড্ডীন নোনা মানুষের ভিড়ে তাদের আলাদা করে কার বাপের সাধ্য।

২৮ মার্চ ২০১৭, ইএমকে সেন্টারের টয়লেটে বসে, ঢাকায়। 

3 thoughts on “ছাদে উঠে গিয়ে”

  1. শুরুতে ভাবলাম, একটা গদ্যই হবে। শেষে গিয়ে ভাবলাম, তাহলে এটা টানা পদ্য! আসলে লেখিকা কি লিখেছেন?

    Reply

Leave a Reply to Bralet Cancel reply