সাফল্যের মানদণ্ড

আন্দ্রে শার্লের লবড ক্রস, মারিও গোটশে বুক দিয়ে আলতো করে বলটা ঠেকিয়ে কোণাকুণি ভলিতে আর্জেন্টিনার জালে পাঠালেন। সময় থমকে যাওয়া একটা মুহূর্ত। জার্মানি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

৭ বছর সামনে তাকান। গোটশে বায়ার্ন মিউনিখে পুরোপুরি ফ্লপড হয়ে দ্বিতীয়বারের মত ডর্টমুন্ড ঘুরে এখন নেদারল্যান্ডের পিএসভিতে খেলছেন। শার্লে বিভিন্ন ক্লাব ঘুরে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বিষণ্নতাকে কারণ দেখিয়ে অবসর নিয়ে ফেলেছেন।

কোথায় মেসি-রোনালদো, আর কোথায় গোটশে-শার্লে; তাই না?

আমাদের জীবনে যখন আমরা সাফল্য নিয়ে কথা বলি, আমরাও এভাবে ভাবি। অমুক গুগলে গেছে, তমুক বিসিএস ক্যাডার। কী করেছি আমি জীবনে? প্রশ্নটা খুবই যুক্তিযুক্ত। নিজেকে এই প্রশ্ন করার মাধ্যমেই বেরিয়ে আসবে নিজের প্রকৃত ব্যবহারযোগ্যতা। কিন্তু মানদণ্ডটা কেন অন্য মানুষের তুলনায়?

মেসি-রোনালদো দুনিয়া উল্টিয়ে ফেললেও শার্লে-গোটশের ঐ ম্যাজিক মোমেন্ট পাবে না। ৫ টা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতলেও পাবে না বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ। বছরে বছরে ১০০ গোল করলেও পাবে না সময় থামিয়ে দেওয়া সেই মুহূর্ত। শার্লে-গোটশে হয়তো অত বড় মাপের খেলোয়াড় হতে পারলেন না, কিন্তু তারা আজীবন একটা সোনার মেডেল দেখে ফিরে যেতে পারবেন ঐ একটা মুহূর্তে।

তাই গুগলের প্রোগ্রামার মানেই যে সে বাংলাদেশের একজন গ্রামীণ কৃষকের থেকে বেশি সফল, তা না। আপনার সাফল্যের মানদণ্ড একান্তই আপনার। আপনার যদি লাখ টাকার চাকরিতে শান্তি লাগে, তাতেও দোষের কিছু নেই। আপনার যদি স্বনির্ভর খামার করে শান্তি লাগে, তাতেও দোষের কিছু নেই। সাফল্যের ব্যক্তিগত সংজ্ঞা সব সময়ই আপনার নিজের হাতে।

এটা গেল ব্যক্তিগত মানদণ্ডের হিসাব। আর সামাজিক মানদণ্ড হওয়া উচিত একজন মানুষ অন্য মানুষের জন্য কী করেছে, তার উপর ভিত্তি করে। চাকরি পাওয়া একটা ব্যক্তিগত অর্জন। এটা কেবল তখনই সামাজিক মানদণ্ডে সফলতার দাবিদার হবে, যখন আপনি চাকরিতে গিয়ে সঠিকভাবে নিজের কাজটা করতে পারবেন, অন্য পাঁচজন মানুষের জীবনকে সুন্দর করতে পারবেন।

আমি ছোটবেলা থেকেই বিখ্যাত মানুষদের ফ্যান ছিলাম; বড় বড় ফুটবলার, ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদদের দেখে অবাক হতাম। আমার এক স্যার একবার বলেছিলেন, তুমি এখন যেখানে আছো, চাইলে তুমি এদের থেকেও বড় হতে পারবে। বিখ্যাত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারা। এটাই আমার কাছে সাফল্যের সামাজিক মানদণ্ড।

“If you’re not making someone else’s life better, then you’re wasting your time.” – Will Smith

ইয়াসিন সাজিদ

শিক্ষার্থী, আইআইটি,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Comment