আত্নশুদ্ধি

বেশ জোরেশোরে একটা বাতাসের ঝাপটা জানালায় লেগেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।আমি ক্লাসে বসে আছি,১০১নাম্বার কোর্সের ক্লাস হচ্ছে।যে স্যার ক্লাস নিচ্ছেন তিনি হচ্ছেন ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে কঠোর এবং অসম্ভব সৎ মানুষ। জীবনে কখনো কাউকে ছাড় দেননি,মানবিক কারণকেও তিনি দাম দেননা তাঁর কাছে সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। জাগতিক কোন সমস্যা তাঁকে বাধা দিতে পারবেনা।
যাইহোক আমি একেবারে শেষ বেঞ্চে বসি,বেঞ্চ থেকে উঠে আমি স্যারের দিকে এগোতে থাকলাম। পুরো ক্লাস রুম আমার দিকে তাকিয়ে আছে,স্যারের চোখ বড় হয়ে গিয়েছে।আমি উনার কাছে গিয়ে বললাম,স্যার আমি আজকের ক্লাসটা করতে চাচ্ছি না,বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আমি ভিজবো।
স্যারের মুখ ভর্তি বিস্ময়, এমন কথা হয়তো তিনি জীবনেও শোনেননি। স্যার যতটুকু সম্ভব কঠোর চেহারা করে বললেন,তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলতেছো? তুমি আমার ক্লাস চলাকালীন সময়ে এসে বলতেছো ক্লাস না করে বৃষ্টিতে ভিজবে?
আমি বললাম, স্যার এই শহরে এরকম বৃষ্টি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টিতে গতবছরের সমস্ত পাপ মুছে যায়,আত্মশুদ্ধি হয়।আমি স্যার আত্মশুদ্ধি করতে চাই,এই বৃষ্টি মিস করলে দুইবছরের পাপ নিয়ে পরের বর্ষা অব্দি অপেক্ষা করতে হবে।
স্যার বললেন,তোমার কি মনে হয় আমার এই বৃষ্টিতে ভেজা উচিত?
আমি খুব সহজ সরলভাবে বললাম,হ্যাঁ।
স্যার রাগে ফুঁসে উঠেছেন।আমার দিকে না তাকিয়েই ঝাড়ি দিয়ে বললেন গেট লস্ট।
আমি এতসব না ভেবে বেরিয়ে আসলাম। আমার উদ্দেশ্য বৃষ্টিতে ভেজা,আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে দুই সারি গাছ দিয়ে ঘেরা বিশাল রাস্তায় ভয়ানক সুন্দর বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করলাম।চারদিক থেকে জঙ্গলের গন্ধ। এত মনমুগ্ধকর গন্ধ আমি আগে কখনো পাইনি। এই পবিত্র জলের স্পর্শে ঈশ্বর নিশ্চয়ই যেকোন পাপ ক্ষমা করে দিবেন।

রোববার আর মঙ্গলবার ১০১নাম্বার কোর্সের ক্লাস হয়। আমি সকালে ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার ক্লাসে আসেননি। আগেই বলেছি স্যার হচ্ছেন অসম্ভব সৎ এবং নিয়মানুবর্তী মানুষ, তিনি গত গত দুই বছরে একটি ক্লাস ও মিস করেননি। আজকে ক্লাসে আসেসনি বলে সবার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হলো। আমরা কয়েকজন অফিসে খোঁজ নিতে গেলাম।অফিসের পিয়ন জানালো ,গত রোববার বৃষ্টিতে ভিজে স্যার নাকি জ্বর বাঁধিয়েছেন।

Leave a Comment