একজন তারাশঙ্কর

জান্নাতুল ফেরদৌস

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলা কথা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় শিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৯৮ খৃস্টাব্দের ২৩ জুলাই পশ্চিম বাংলার বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিশীল জীবনের সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কোলকাতা শহরে। তারাশঙ্কর তাঁর বিশাল সাহিত্য ভান্ডারের মধ্য থেকে অন্তত ১০টি উপন্যাস এবং বেশ কিছু অনন্য সাধারণ ছোট গল্পের জন্য স্বকালের সীমা ছাড়িয়ে উত্তরকালের অগণিত পাঠককে স্পন্দিত করতে সমর্থ হয়েছেন।

এ অর্থেই তিনি বাংলার চিরায়ত কথা সাহিত্যের কালজয়ী শিল্প প্রতিভা। বিলীয়মান সামন্ত সমাজের এ ক্ষুদ্র জমিদার পরিবারে তারাশঙ্করের জন্ম। তাঁর পিতার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী। তাঁর পিতা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বৈমাত্রেয় পিসি শৈলজা ঠাকুরাণী ছিলেন তারাশঙ্করের ভাষায় ‘সেকালের প্রতিনিধি’। পক্ষান্তরে মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সমর্থক এ বিদুষী মহিলা। এক দিকে ধর্মশাস্ত্রের অবাধ অনুশীলন এবং অন্যদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে তারাশঙ্করের মানস গঠিত হয়েছিল।লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ তে এন্ট্রান্স পাস করে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। সে সময় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন দানা বাঁধে। সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯২১ সালে তিনি এক বছর অন্তরীণ থাকেন। ফলে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।

প্রভাবতীর বাস্তব দেশপ্রেম শৈশবেই তারাশঙ্করকে উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর (৩০শে আশ্বিন) যেদিন বঙ্গভঙ্গ আইন কার্যকরী হয় সেদিনই তিনি ৭ বছরের শিশু পুত্রের হাতে রাঁখি বেঁধে দিয়েছিলেন। পিতার রাজদ্রোহী মনোভাব, মা-এর দেশপ্রেম এবং রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে মাতৃকুলের সংশ্রব কৈশোরেই তাঁর মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। বিপ্লবী রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে স্বল্পস্থায়ী সংযোগও ঘটে তাঁর। এর পর ১৯২১ খৃস্টাব্দে গান্ধী আহূত অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে তার স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে শর্তহীন গান্ধীপন্থী এবং রাজনীতির পরিভাষায় কংগ্রেসম্যান পরিচিতিই এনে দেয়। দলীয় রাজনীতির সঙ্গে তারাশঙ্করের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কখনও তেমন একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গ্রেফতার হন। তারাশঙ্করকে বিচারের জন্য সিউড়ি শহরেও নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারে তাঁর কারাদন্ড হয়। সি ক্লাস বন্দীরূপে তিনি কয়েকমাস জেল খাটেন। কারাগারেই এই প্রবাদপুরূষ এর সাহিত্য চর্চার প্রকাশ ঘটে। এখানেই তিনি লেখা শুরু করেন ‘পাষাণপুরী’ আর ‘চৈতালী ঘূর্ণি’। বাংলার কংগ্রেস রাজনীতির উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতের কারণে রাজনীতির প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। কারামুক্তির দিনেই তারাশঙ্কর প্রতিজ্ঞা করেন যে, সাহিত্য সাধনার মাধ্যমেই তিনি দেশ সেবা করবেন। অর্থাৎ ১৯৪৭ খৃঃ পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গে সংশ্রব রক্ষা সাহিত্যিকের। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর কালজয়ী উপন্যাসগুলো রচনা করেন।একেকটা সৃষ্টির রস আস্বাদনে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি ও জীবন জিজ্ঞাসার গভীরতা অনুভূত হয়। বিশ শতকের শিল্পী হয়েও তিনি ঐতিহ্য অনুসরণ থেকে দূরে সরে যান। আধুনিক হওয়ার গলদঘর্ম প্রচেষ্টাও তাঁর ছিল না। উচ্চকণ্ঠে স্বতন্ত্র ঘোষণা বা রুগ্ন মানসিকতা কিংবা কারু-সর্বস্বতা থেকে তিনি সর্বদা নিজেকে মুক্ত রেখেছিলেন। তবু বর্তমান যুগের তরঙ্গ সঙ্কুলতাকে তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন নি। সমাজের ও জীবনের সর্বস্তরের ক্ষয়িষ্ণুতা তাঁর কাছে গভীর বেদনার বাণী বহন করে এনেছিল। সমকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের পর্বে পর্বে তিনি সেই বেদনার সমাধান প্রত্যাশা করেছেন।

প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ক্রমান্বয়ে তিনি রচনা করেন ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৩৯), ‘গণদেবতা’ (১৯৪৩), ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘মন্বন্তর’ (১৯৪৪), ‘সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’ (১৯৪৬), আর ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৬-৪৭) যেখানে সমাজ ও রাজনীতি পরস্পরিত হয়ে রাঢ় বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের শিল্পসাক্ষ্য নির্মিত হয়। অন্যদিকে রচিত হল ‘রায় কমল’ (১৯৩৫) ও ‘কবির’ (১৯৪২) মত রাজনীতি নিরপেক্ষ কালজয়ী উপন্যাস।

জীবনের রূঢ় বাস্তবতা বা দাসত্বের শিকল,সমাজের সব অসংগতিই লেখকের লেখনীতে ধরা পড়েছে ভিন্ন ভিন্ন আঙিকে।যেমন- ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ এই উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র চাষী গোষ্ঠী আর তার স্ত্রী দামিনী গ্রাম্য শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য শহরে আসে। গোষ্ঠ কারখানায় চাকরি পায়। স্বামী-স্ত্রী বস্তিতে থাকে। গোষ্ঠ মজুরদের ধর্মঘটে অংশ গ্রহণ করে, যার সঙ্গে নিম্ন-মধ্যবিত্ত কর্মীরাও জড়িত ছিল।এর মধ্য দিয়ে তারাশঙ্কর বাংলা কথা সাহিত্যে নতুন বক্তব্য নিয়ে আসেন।তেমনি ‘ধাত্রী দেবতা’ উপন্যাসে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইতিহাসকে শিল্পের মহিমা দান করেন। আইন অমান্য আন্দোলনকালে নিজের কারাবরণকে শিবনাথের আত্মকথায় ফুটিয়ে তুলতেও দ্বিধা করেননি।আরেক অনবদ্য সৃষ্টি ‘কালিন্দী’তে রায়হাট গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কালিন্দী নদীতে (ব্রাহ্মণী স্থানীয় নাম) জেগে ওঠা নতুন চরের মালিকানা স্বত্ব নিয়ে দুই জমিদার পরিবারের অন্তর্কলহ,শেষে তৃতীয় এক পক্ষের আগমনে স্বশ্রেণীর মধ্যকার ঐতিহ্যিক অন্তর্কলহ এক যাদুকরী আপস রফায় মিটে যাওয়া।সর্বোপরি চরকে নিয়ে দ্বন্দ্ব-মাত্রা ও গুণ উভয় দিক থেকেই লাভ করল ভিন্ন তাৎপর্য। প্রাক-ধনতান্ত্রিক যুগের প্রতিভু যন্ত্রকলের মালিক ও অর্থশক্তিতে করায়ত্ব করে নিলেন সাঁওতাল সম্প্রদায়কে। কালিন্দীর চরে স্থাপিত হলো নতুন যুগের যন্ত্রকল। কৃষিজ সাঁওতালরা পরিণত হলো শ্রমদাসে। স্বর্ণপ্রসবিনী কালিন্দীর চর বিমলবাবুর কুক্ষিগত হলো। উপন্যাসের শুরুতে যে দ্বন্দ্ব ছিল সামন্ত সমাজের অভ্যন্তরীণ কলহের মধ্যে সীমাবদ্ধ, মধ্য পর্যায়ে তা দুই অর্থনৈতিক শ্রেণীর পরস্পর সংঘাতে রূপ নিল। আর উপান্তে-তারাশঙ্কর প্রতিষ্ঠা করলেন অমোঘ সমাজসত্য।

অনুরূপ ‘গণদেবতা-পঞ্চগ্রাম’ এ তারাশঙ্কর বোঝাতে চেয়েছেন অবক্ষয়- উন্মুখ সমাজে যে নবপ্রেরণা ক্রমশঃ সঞ্চারিত হচ্ছে, তার নিয়ামক অর্থ বা বিত্ত। সামন্ত-সমাজের রূপান্তর-প্রক্রিয়ায় অর্থ ও অর্থনীতির ভূমিকা এভাবেই গণদেবতা- পঞ্চগ্রামে শিল্পের অবয়ব সন্ধান করেছে।আরেক কালজয়ী সৃষ্টি হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় কৌমসমাজের গোষ্ঠীজীবন বিষয়ভুক্ত হয়েছে। তারাশঙ্কর দেখাতে চেয়েছেন মূল্যবোধের বিপর্যয় এবং পরিণতিতে কাহার সম্প্রদায়ে স্বগ্রাম থেকে উচ্ছেদ হওয়ার প্রসঙ্গ।

এছাড়াও তারাশঙ্করের প্রথম গল্প ‘রসকলি’ সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল-এ প্রকাশিত হয়। এছাড়া কালি কলম, বঙ্গশ্রী, শনিবারের চিঠি, প্রবাসী, পরিচয় প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। প্রথম জীবনে কিছু কবিতা লিখলেও কথাসাহিত্যিক হিসেবেই তারাশঙ্করের প্রধান খ্যাতি।‘কবি’ উপন্যাসটি তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের কালজয়ী সাহিত্যকর্ম। উপন্যাসটির মূল বিষয় তৎকালীন হিন্দু সমাজের রূপ ও আচার, প্রেম, জীবনসংগ্রাম, মনের বিভিন্ন দিক ইত্যাদি। প্রেম এ উপন্যাসের মূল উপজিব্য বিষয়। মুলত একটি মানুষকে ঘিরেই উপন্যাসটি আবর্তিত। সে মানুষটি হল নিতাই, নিতাইচরন। নিতাই খুব নিচ বংশের ছেলে, পুর্ব পুরুষের পাপে সে অতিষ্ট। চোর, ডাকাত, খুনিদের বংশে জন্মেও সে চায়, ‘জন্মের চেয়ে কর্মকে বড় করে দেখতে’। সে সুমিষ্ট কন্ঠে জগৎকে জয় এবং বংশের পাপ লোচন করতে যায়। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।এভাবেই কাহিনি এগিয়ে যায়।‘ডাক হরকরা’ তারাশঙ্করের আরেকটি সেরা গ্রন্থ। রাত্রির বাঁধা উপেক্ষা করে যারা ব্রিটিশ ভারতের কোণায় কোণায় ডাক পৌঁছে দিত, সেসব ডাক-হরকরার সংগ্রামী জীবন নিয়ে লেখা সুকান্তের কবিতা রানার এর সেই সূত্র ধরেই একজন ডাক বহনকারীকে নিয়ে লেখা তারাশঙ্করের একটি গল্প। এটি এক নীতিবান ডাক বাহক ও তার দুশ্চরিত্র সন্তানকে নিয়ে লেখা একটি অসাধারণ গল্প।

তারাশঙ্কর চার দশকের বেশিকাল ধরে সাহিত্য সাধনায় ব্রতী ছিলেন। এসময়ে তিনি প্রায় দুশ গ্রন্থ রচনা করেন। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তাঁর সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা। এরমধ্যে ১৯৫৭ সালে তিনি চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন ভ্রমণে যান। এরপরের বছর তিনি এফ্রো-এশিয়ান লেখক সঙ্ঘের কমিটি গঠনের প্রস্তুতিমূলক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গমণ করেন। এরপর তিনি তাসখন্দে অনুষ্ঠিত এফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।মাঝখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনে তিনি কিছুকাল কলকাতায় কয়লার ব্যবসা এবং কিছুকাল কানপুরে চাকরি করেন।

তিনি নিজে জমিদার বংশের সন্তান হয়ে কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে জমিদারি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়; পাশাপাশি নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং দিকে দিকে কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তখন একদিকে চলছিল গ্রাম্য সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে শহর জীবনের বিকাশ। সমাজের এ নীরব পরিবর্তন তাঁর রচনায় নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।এছাড়াও আদিমতান্ত্রিক ঐতিহ্য, প্রেম, অপ্রেম, পরকীয়া, সৌখিনতা, বিলাসিতা, বৈরাগ্য, বৈষ্ণব সহজিয়াভাব, অবহেলা, প্রবঞ্চনা, তঞ্চকতা, দ্বন্দ্ব- সংঘাত, সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, ভাঙা-গড়ার কাহিনী বিধৃত করেছেন নানা অনুষঙ্গে, নানা আঙ্গিকে, নানা ঘরাণায়।তাঁর একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘ত্রিপত্র’ (১৯২৬) প্রকাশ করেও তিনি ছিলেন মনে প্রাণে আগাগোড়া কাব্যগ্রাহী। পরবর্তীকালে তাঁর লেখা গল্প- উপন্যাসের কাব্যিক গদ্যের উপস্থিতি উজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর। তারাশঙ্করের রচনার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য-তিনি পরম যত্নের সঙ্গে মানুষের মহত্ত্বকে তুলে ধরেছেন। শরৎচন্দ্রের পরে কথাসাহিত্যে যাঁরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তারাশঙ্কর ছিলেন তাঁদের একজন। বিশেষ করে তার রচিত ছোট গল্পগুলো একেকটি হীরকখন্ডতুল। তিনি বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান কারিগর ও নির্মাতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্প রচনায় হাত না দিলে হয়তো তারাশঙ্করই হতেন বাংলা ছোটগল্পের জনক।কালজয়ী সব সৃষ্টি অমর করে রাখতে তাঁর ‘দুই পুরুষ’, ‘কালিন্দী’, ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘জলসাঘর’, ‘অভিযান’ ও ‘বেদেনি’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘জলসাঘর’ ও ‘অভিযান’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়।

তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘শরৎস্মৃতি পুরস্কার’ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৭), ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৬), আরোগ্য নিকেতনের জন্য ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ১৯৫৫), একই উপন্যাসের জন্য ‘সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার’ (১৯৫৬), ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার’ (১৯৬৭) এবং ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ (১৯৬২) ও ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৬৮) উপাধি লাভ করেন।

রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা এই কথাসাহিত্যিক জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেও মানষপটে মানবিকতা,বৈষম্যহীন সমাজের যে চিত্রগল্প একেঁ রেখে গেছেন তারই আবহমান ধারণা বাঙালি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্বপ্নের অভিন্ন ক্যানভাসে ভিন্ন রংচ্ছটায় লালন করে চলেছে।পাঠক হিসেবে ক্ষুদ্র চিন্তায় একজন শিল্পীস্বত্ত্বার স্বার্থকতা আমার কাছে যেন এরকমই সাবলীল,সুনিপুণ যার গভীরতা ব্যাপ্তিহীন।

Leave a Comment