নবম শতকের ইংল্যান্ড।
দুর্ধর্ষ লুটেরা জলদস্যু ভাইকিংদের উৎপাতে অতিষ্ঠ অ্যাংলো স্যাক্সনরা। প্রতি গ্রীষ্মে নর্দার্ন ইংল্যান্ডের উপকূলে নোঙর করে ভাইকিংরা। হত্যা ধর্ষণ লুটপাট করে প্রচুর সম্পদ নিয়ে শীতের শুরুতে তারা বাড়ি ফেরে। এদের নেতৃত্ব দেন এক ভাইকিং বীর, রাগনার লথব্রোক। ধনসম্পদে পূর্ণ ইংরেজ চার্চ আর প্রাসাদ লুটে রাগনার ততদিনে এক অতিমানবীয় ফিগারে পরিণত হয়েছেন।
স্যাক্সন রাজারা এর প্রতিকার খোঁজেন। কোনো এক সুযোগে নর্দাম্বিয়ার রাজা অ্যায়লা (Aelle) রাগনার লথব্রোককে বন্দী করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হন রাগনার। তাকে সাপের গর্তে ফেলে দেওয়া হয়।
পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে বিশাল ভাইকিং বাহিনী নিয়ে নর্দাম্বিয়া আক্রমণ করেন আইভার দ্যা বোনলেস, রাগনারের কনিষ্ঠ পুত্র। ভাইকিংদের মধ্যে নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাত ছিলেন তিনি। কিং অ্যায়লা ধরা পড়েন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত হন। সেই মৃত্যু কার্যকর করেন আইভার , নিজহাতে। পিঠে ব্লাড ইগল তৈরি করে সেই মৃত্যু কার্যকর করা হয়।
এই কাহিনীটা স্যাক্সো গ্রামাটিকাস নামধারী ত্রয়োদশ শতকের এক ভাইকিং কবির সাগা(ভাইকিং গাথাকাব্য) থেকে নেওয়া। ঘটনার সময়কাল থেকে প্রায় চারশ বছর পরের রচনা বলে অনেকেই ব্লাড ইগলকে ভাইকিং প্রোপাগান্ডা বলে মনে করেন, তবে আধুনিক ইতিহাসবেত্তারা অনেকাংশেই একমত যে, ব্লাড ইগল নামের এই ভয়ংকর মৃত্যুদণ্ড নিছক প্রোপাগান্ডা নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এর সত্যতা মিলেছে।
মধ্যযুগে মৃত্যুদন্ড ছিলো অতি স্বাভাবিক ঘটনা। রাজা রাজড়ারা কথায় কথায় গর্দান নিয়ে নিতেন। তখন আসলে শাস্তির মাত্রা নির্ভর করতো মৃত্যুদন্ডের ধরনের উপর। বড় মাত্রার অপরাধের শাস্তি ছিলো যন্ত্রণাদায়ক কোনো মৃত্যু, যা একইসাথে দর্শকদের জন্য হতো উপভোগ্য। মৃত্যুদন্ড ছিলো রীতিমতো বিনোদনের একটা উপায়।
ব্লাড ইগল সেরকমই এক ভাইকিং প্রথা। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে, ভিকটিমকে অসম্মান করতে বা বড় ধরনের ভীতি ছড়িয়ে দিতে এই প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হতো।
ব্লাড ইগল করার জন্য ভিকটিমকে হাঁটু গেড়ে বসানো হতো, দুই হাত থাকতো দুদিকে ছড়ানো। জল্লাদ ধারালো কুঠার বা বড় আকারের ছুড়ি দিয়ে টেইল বোন থেকে কাঁধ পর্যন্ত উন্মুক্ত করে নিতো। এরপর কুঠার দিয়ে পাঁজরের প্রতিটা হাড় মেরুদন্ড থেকে আলাদা করে দুপাশে টেনে ছড়িয়ে দেওয়া হতো, রিবগুলোর সাথে চামড়া লেগে থাকায় সামনে থেকে দেখে মনে হতো পাখির ডানা। কিছু কিছু সাগা অনুযায়ী, অধিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য ক্ষতস্থানে লবণ মাখিয়ে দেওয়া হতো। শেষে দুই ফুসফুস দুদিকে টেনে বের করে আনা হতো। সামনে থেকে দেখে মনে হতো যেনো এক রক্তাক্ত ঈগল ডানা মেলে আছে। পুরো প্রক্রিয়াটি করা হতো ভিকটিমকে জ্যান্ত রেখে। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বেচারা মৃত্যুকে বরণ করতো।
ব্লাড ঈগল কেবল এক ধরনের মৃত্যুদন্ডের পদ্ধতিই নয়, বরং দেবতা অডিনের কাছে ভিকটিমকে উৎসর্গ করা হতো এভাবে। অর্থাৎ একে একপ্রকার ধর্মীয় রিচুয়ালও বলা চলে।
শুধু কিং অ্যায়লা নয়, আরো বেশ কজন সম্ভ্রান্ত অভিজাত ব্যক্তিকে ব্লাড ঈগলের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছেন হাফডান লং লেগ। ভাইকিং আর্ল আইনার হাফডানের আর্লডম দখল করে নেন এবং হাফডানের ব্লাড ঈগল ঘটান। কিং ম্যালগুলাই অব মুনস্টার, আর্চবিশপ অ্যায়লিয়াহ কিংবা অ্যাংলো স্যাক্সন কিং এডমুন্ড অব ইংল্যান্ড, প্রত্যেকেই ব্লাড ঈগলের শিকার হয়েছিলেন বলে নর্ডিক সাগাগুলোয় বলা হয়।
ব্লাড ঈগল করা হতো দুটো কারণে। প্রথমত, দেবতা অডিনের প্রতি উৎসর্গ করা। দ্বিতীয়ত, বিজিত অঞ্চলের মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া। ব্লাড ঈগল এতটাই ভীতিকর ছিলো, কোনো গ্রামে ব্লাড ঈগলের গুজব উঠলে সে গ্রাম মুহূর্তেই খালি হয়ে যেতো। ইউরোপজুড়ে ভাইকিংদের যে অপরাজেয় ও ভয়ংকর ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিলো, তার পিছনে ব্লাড ঈগলের বিশাল অবদান ছিলো। ব্লাড ঈগলের সত্যতা নিয়ে এখনো নিসন্দেহ হওয়া যায়নি। এতোটা ভয়ংকর বিষয় মানতে এখনো ঐতিহাসিকদের কষ্ট হয়। একে নর্ডিক প্রোপাগান্ডা হিসেবেও অনেকে বর্ননা করেছেন। তবে রিউমার হোক আর রিচুয়াল, ব্লাড ঈগল মধ্যযুগীয় ইউরোপের এক ভয়াবহ আতংকের নাম, সন্দেহ নেই।
ভাইকিংদের শাস্তি দেওয়ার আরো কিছু নিষ্ঠুর পদ্ধতি ছিলো। হাং মিট নামের এক পদ্ধতিতে ভিকটিমের গোড়ালিতে ফুটো করে সেখান দিয়ে দড়ি ঢুকিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। ফ্যাটাল ওয়াক নামের এক পদ্ধতিতে ভিকটিমের পেট চিড়ে ইনটেস্টাইন(অন্ত্র) বের করে আনা হতো। সেই অন্ত্র এক জল্লাদ হাতে নিতো, ভিকটিমকে একটা গাছের চারদিকে এ অবস্থায় হাঁটতে হতো। জীবন্ত ভিকটিমের নাড়িভুঁড়ি গাছের চারদিকে পেঁচিয়ে দেওয়া হতো।
যে প্রক্রিয়াতেই হোক, ভাইকিংরা নিষ্ঠুরতাকে এক ভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। প্রতিটা শাস্তিই সাধারনের শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের এক ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিতো।
লেখকঃ প্রাচুর্য বিশ্বাস মুগ্ধ, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
Howdy! Someone in my Myspace group shared this website with us
so I came to take a look. I’m definitely enjoying the information.
I’m bookmarking and will be tweeting this to my followers!
Outstanding blog and brilliant design and style.