মহাকাশে ওরা!

আমরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অধিবাসী। আমাদের এই ভূপৃষ্ঠ এর উপর রয়েছে সুবিস্তৃত মহাকাশ। এই মহাকাশে একমাত্র মানুষই কিন্তু অভিচারী নয়। প্রথম মহাকাশ অভিযাত্রী মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন ইতিহাসে তাঁর নাম লেখানোর আগেই অন্য অনেক প্রাণী প্রবেশ করেছে মহাকাশে। এমনকি সেই সমস্ত প্রাণী সংগ্রহ করেছে অনেক তথ্য। আর তাদের সংগ্রহিত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে মানুষ অবতরণ করেছে মহাকাশে, প্রবেশ করেছে পৃথিবীর কক্ষপথে, আবিষ্কার করেছে নতুন গ্রহ।
মানুষের মধ্যে মহাকাশচারী প্রথম নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশে যাত্রা করার আগেই লাইকাসহ ৩৬টি কুকুর এবং আরও অনেক প্রাণী প্রবেশ করেছে মহাকাশে। তবে লাইকাই প্রথম কুকুর (এবং প্রথম প্রাণী), যে কক্ষপথে ভ্রমণ করেছে।
নভোচারী সেই সব প্রাণীদের নিয়েই এই ফিচার।

মৌমাছি (Fruit flies)
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, স্পেসে ভ্রমণের যাত্রা সুচনা করে মৌমাছি। এই ক্ষুদ্র প্রাণীর দল তৈরি করে এক ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে Nazi V-2 রকেটে করে তাদের যাত্রা শুরু হয়। মহাকাশে ভ্রমণকারী প্রথম প্রাণী তারা। প্রাণীদের উপর মহাকাশের আলোর বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে পাঠানো হইছিল এই ক্ষুদে প্রাণ মৌমাছিদের।
তবে আনন্দের সংবাদ ইতিহাস তৈরিকারী মৌমাছিরা নিরাপদে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পেরেছে। এই মৌমাছি গুলো সত্যিই ভাগ্যবান।

ঐতিহাসিক লাইকা
৩ নভেম্বর, ১৯৫৭ সালে মহাকাশযান (স্পুটনিক-২) করে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল লাইকা (স্ত্রী-কুকুর)। স্পুটনিক-২ এর যাত্রা শুরুর ৯ দিন আগে মস্কোর রাস্তা থেকে সোভিয়েতরা লাইকাকে সংগ্রহ করেন। তারা লাইকাকেই বেছে নিয়ে মূলত দুইটি কারনে। লাইকা ছিল আকারে ছোট এবং শান্ত প্রকৃতির।
মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের পাঁচ মাস পর, পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের সময় (এপ্রিল, ১৯৫৮) বায়ুমণ্ডলেই বিধ্বস্ত হয়ে যায় স্পুটনিক-২। তবে তারও আগে মহাকাশযানটির ভেতর মারা যায় লাইকা। অতিরিক্ত তাপ আর আতঙ্কের জন্য মারা যায় লাইকা।
সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা বলেন, তবে লাইকা অরবিটে বা পৃথিবীর কক্ষপথে ৭ দিন পুরো সময় কাটিয়েছিল। অরবিট ভ্রমণের দিক দিয়ে লাইকাই প্রথম প্রাণী যে কক্ষপথে ভ্রমণ করেছে।
লাইকার সাফল্যের প্রায় চার বছর পরে ইউরি গ্যাগারিন পাড়ি জমিয়েছিলেন মহাকাশে। এর দুই বছর বাদে ভ্যালেনতিনা তেরেসকোভাও মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল।

ইঁদুর(Mice)
আমি মোটেও এই লোমযুক্ত প্রাণীদের ভক্ত না। তবে স্পেসে প্রাণীকূলের অবতরনের দিক দিয়ে ইঁদুর দ্বিতীয়।
১৯৫০ সালের ৩১ আগস্ট আমেরিকান V-2 রকেটে করে তাদের পাঠানো হয় স্পেসে। তবে দুর্ভাগ্যবশত প্যারাসুট সিস্টেমে কিছু সমস্যার কারনে ইঁদুর গুলোকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। চীন এবং রাশিয়াও বেশ কয়েকবার ইঁদুর পাঠিয়েছে স্পেসে।
তবে ১৯৬১ সালে ফ্রান্স কর্তৃক “Hector” রকেটে ইঁদুরের যাত্রা সফল হয়।

কুকুর(Dog)
মানুষের পক্ষে মহাকাশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ১৯৫০ ও ১৯৬০ সালে USSR (ইউএসএসআর) কুকুর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। সোভিয়েতরা (Soviets) বিশ্বাস করত স্পেস ভ্রমণের জন্য কুকুরের থেকে ভালো প্রাণী হতেই পারে না।

টিকটিকি(Geckos)
টিকটিকির মত লিকলিকে প্রাণীকেও বিজ্ঞানীরা ছাড়েননি। রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা টিকিটিকি স্পেসে পাঠান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল অভিকর্ষের প্রভাব প্রজননের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে তা দেখার।

বিড়াল(Cats)
১৯৬৩ সালে ফরাসি বিজ্ঞানীরা বিড়াল পাঠান মহাকাশে। তাঁদের পাঠানো বিড়ালের মাথায় বসানো ছিল আধুনিক যন্ত্র। ফরাসি ভাষায় বিড়াল পরিচিত Félicette নামে। বিজ্ঞানীরা বিড়ালের মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড লাগিয়ে দেন বিড়ালের মনোবৃত্তি রেকর্ডের উদ্দেশ্যে।

ব্যাঙ(Frog)
নাসা কর্তৃক ১৯৭০ সালে দুইটা ব্যাঙকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয়। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য ছিল ব্যাঙের উপর মহাকর্ষের প্রভাব পর্যালোচনা করা। যদিও সেই মহাকাশযান পুনরুর্দ্ধার করা সম্ভব হয় নি।
বিজ্ঞানীরা ব্যাঙের আচরণ পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে স্পেসযানে রেকর্ডার রাখেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা সেই রেকর্ড দেখে ব্যাঙের শারীরিক পরিবর্তন ও আচরন পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করেন। সেইসাথে সংগ্রহ করেন অনেক তথ্য।

মাকড়সা(Spiders)
Arabella এবং Anita নামক দুইটি মাকড়সা ছিল স্কাইল্যাব মিশন 3 এর অংশ। এই দুইটি মাকড়সাই ১৯৭৩ সালে স্পেসে প্রবেশ করে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল মাকড়সার জালের ঘুর্ণন দেখা এবং কিভাবে মাকড়সারা স্পেসে গিয়ে জাল বুনতে পারে তা দেখা। কিন্তু এই স্কাইল্যাব মিশন-৩ সম্পূর্ণ হতে পারে নি। কারণ মাকড়সা দুইটি জলবিয়োজন বা dehydration এর কারনে মারা যায়। তবে তারা সফলভাবে জাল বুনতে পেরেছিল।
বিজ্ঞানীরা বলেন, মাকড়সাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা সম্মোহিত হয়ে জাল বুনে যাচ্ছে যদিও শূন্য মহাকর্ষ বলে।

জেলিফিস(Jellyfish)
আপনার কি মনে হয় মানুষ আর জেলিফিশের মধ্যে মিল আছে?
তবে নাসার বিজ্ঞানীরা জেলিফিশকেও মহাকাশ ভ্রমণে পাঠিয়েছে। বিজ্ঞানীরা নিজেরাই অবাক হয়েছেন যখন তারা দেখেছেন অ্যাস্ট্রো-জেলিফিশ স্পেস থেকে ফিরে আর সাঁতার কাটতে পারছে না।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, সিএসই বিভাগ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Loading

Leave a Comment